হাতে হাত মিললেও গলল না বরফ

হাত মেলানোর সৌজন্য দেখালেন দু’জনই। হাসি মুখে দাঁড়ালেনও ক্যামেরার সামনে। নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফের যে ছবি ওঠার পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন টুইট করেন, ‘এই ছবির জন্যই আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম।’ এর ফলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দমবন্ধ আবহাওয়া কিছুটা হাল্কা হলেও দুই পড়শি দেশের মধ্যে বরফ কিন্তু আদৌ গলল না। বরং এ দিনই কাশ্মীরে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের পরে দিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করলে সম্পর্ক সহজ হবে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

শুধুই সৌজন্য। সার্ক সম্মেলনের শেষ দিনে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে হাত মেলালেন নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডুতে। ছবি: পিটিআই।

হাত মেলানোর সৌজন্য দেখালেন দু’জনই। হাসি মুখে দাঁড়ালেনও ক্যামেরার সামনে। নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফের যে ছবি ওঠার পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন টুইট করেন, ‘এই ছবির জন্যই আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম।’ এর ফলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দমবন্ধ আবহাওয়া কিছুটা হাল্কা হলেও দুই পড়শি দেশের মধ্যে বরফ কিন্তু আদৌ গলল না। বরং এ দিনই কাশ্মীরে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের পরে দিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে, সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করলে সম্পর্ক সহজ হবে না।

Advertisement

গত কাল অবশ্য দুই প্রধানমন্ত্রীর কেউ কারও দিকে ফিরে তাকাননি। শেষ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা হস্তক্ষেপ করেন। তাঁর দেশেই হচ্ছে সার্ক সম্মেলন। তাই মুখরক্ষার একটা দায় তাঁর ছিলই। তবে মোদী-শরিফ হাত মেলালেও এখনই খুব আশার আলো দেখছেন না কূটনীতিকরা। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অনেকেই বলছেন, আজ করমর্দনের পরে ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক চাপানউতোর লঘু হয়ে গিয়েছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেছেন, মোদী-শরিফ আলাদা করে কোনও আলোচনায় বসছেন না। তবে তাঁর মন্তব্য: “ভারত সব সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখে চলতে চায়। আমরা অর্থপূর্ণ আলোচনা চাই। যদি এই করমর্দনের পরে সেই পরিসর তৈরি হয়, আমরা তাকে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু জোর দিতে হবে অর্থপূর্ণ আলোচনার উপরেই।”

গত কাল অবশ্য এই সৌজন্য থেকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীই দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। কূটনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, দু’দেশের নেতার উপরেই অভ্যন্তরীণ চাপ ছিল। গত কাল এমনিতেই ছিল ২৬/১১-র ছ’বছর। যে দিনটিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যদি পাক-প্রধানমন্ত্রীকে খুব বেশি নমনীয় মনোভাব দেখাতেন, তা নিয়ে সমালোচনা হতই। বিশেষ করে সীমান্ত বরাবর পাকিস্তানের বার বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন ও সার্ক সম্মেলনেই পাকিস্তানের বাধায় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি রূপায়ণ ব্যর্থ হওয়া এবং গত কাল সন্ত্রাস-প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব থাকায় পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটাও সত্যি যে, প্রতিবেশী দেশের প্রতি শত্রুমনোভাবাপন্ন হয়ে বেশি দিন চলা মুশকিল। তা ছাড়া, আগামী বছরেই ভারতে আসার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। তার আগে দুই পড়শি দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আবহ নষ্ট হয়েছে, এমন বার্তা দেওয়াও সমীচীন নয়।

Advertisement

একই রকম চাপের মুখোমুখি শরিফও। ভারতকে আগ বাড়িয়ে সৌজন্য দেখাতে গেলে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও দেশের সেনাবাহিনী তাঁকে ছেড়ে কথা বলত না। আবার গত কাল চুক্তি রূপায়ণে বাধা সৃষ্টি করায় সার্কের অভ্যন্তরেই পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল। এই অবস্থায় মুখরক্ষার আশু প্রয়োজন ছিল শরিফের। কূটনীতিকদের ধারণা, শুধুমাত্র রাজনীতির কথা ভেবে দু’দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার কথা ভাববেন না কোনও রাষ্ট্রনেতাই। তাই শান্তিপ্রক্রিয়াকে শেষমেশ গুরুত্ব দিয়েছেন দু’জনে।

গত কাল রাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার ডাকা নৈশভোজে দুই নেতার মধ্যে কথোপকথন হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করা হলেও পরে পাকিস্তানের একটি সূত্র জানায়, খবরটি ঠিক নয়। কিন্তু কাঠমান্ডুর বাইরে ধুলিখেলে এসে মোদী-শরিফের পক্ষে পরস্পরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এক রকম অসম্ভব ছিল। সেখানে হাজির ছিলেন মুষ্টিমেয় অতিথি। সৌজন্য বিনিময় ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে দুই নেতা একটি শব্দও খরচ করেননি বলে খবর।

বস্তুত আজ মোদী-শরিফের করমর্দন ছাড়া সার্ক সম্মেলন কার্যত বিফলেই যেত যদি না সার্কভুক্ত অন্য নেতারা শরিফকে শক্তি সংক্রান্ত চুক্তি ঘোষণায় সই করতে রাজি না করাতেন। ১৮তম সার্ক সম্মেলনের শেষ দিনে আশার আলো বলতে ওইটুকুই। গত কাল পাকিস্তান তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সায় না দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। সার্কের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমশ আরও কমে যাক চাননি কেউই। যদিও ভারত আলাদা করে নেপালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি চুক্তি সই করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন