অস্বস্তি এড়িয়ে উদ্বেগের কথাই শুনলেন ওয়াঙ্গ

তিন ঘণ্টার খোলামেলা এবং দীর্ঘ আলোচনায় নয়াদিল্লি আজ নিজেদের যাবতীয় উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরল বেজিংয়ের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৯
Share:

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চিনা বিদেশমন্ত্রী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এ এফ পি।

তিন ঘণ্টার খোলামেলা এবং দীর্ঘ আলোচনায় নয়াদিল্লি আজ নিজেদের যাবতীয় উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরল বেজিংয়ের সামনে।

Advertisement

গত এক বছর ধরে খারাপ আবহাওয়ার খপ্পরে পড়া ভারত-চিন সম্পর্ক সাময়িক ভাবে হলেও আজ কিছুটা অক্সিজেন পেল বলেই মনে করা হচ্ছে। দু’দেশের শীর্ষ কর্তাদের একাধিক মঞ্চে বৈঠক হবে আগামী তিন মাস। সেই অধ্যায় শুরুর আগে আজ সকালে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ্গ ই-র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বৈঠক, সম্পর্কের ভিত ফের গড়ার প্রশ্নে ইতিবাচক হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আজকের আলোচনায় পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজনীয়তার দিকটি বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সামনে। দূষণমুক্ত শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে ভারতের যাবতীয় উদ্যোগের দিকগুলিকে তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাজুয্য রেখেই এগোতে চাওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে পশ্চিম বিশ্বও ভারতের সঙ্গেই রয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণায়নের কোনও ভৌগোলিক সীমারেখা নেই। সুতরাং নিজেদের স্বার্থেই বেজিংয়ের উচিত ভারতকে সাহায্য করা। পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণ বিরোধিতায় ভারতের করা পদক্ষেপ এবং রেকর্ডও জানানো হয়েছে চিনা নেতৃত্বকে। সূত্রের খবর, এখনই এনএসজি-তে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি না দিলেও, নয়াদিল্লির যুক্তি শুনেছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী। ফিরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে তাঁর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ভারত জানিয়েছে এই বছরের শেষে ভিয়েনায় এনএসজি-র অধিবেশনেই তারা বিষয়টির নিষ্পত্তি চায়। এ জন্য চিনের কোনও ‘টেকনিক্যাল’ প্রশ্ন বা ধোঁয়াশা থাকলে তার উত্তর দিতে প্রস্তুত সাউথ ব্লক।

Advertisement

এনএসজি-র পাশাপাশি জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের প্রসঙ্গটিও আজ আলোচনায় আনেন সুষমা। রাষ্ট্রপূঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ তালিকায় মাসুদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে বেজিং। বৈঠকের পর বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, ‘‘এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে চিন।’’ পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের প্রস্তাবিত আর্থিক করিডর নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়াদিল্লির যে উদ্বেগ রয়েছে সে’টিও আজ অকপটে জানিয়েছেন সুষমা।

হাতে কলমে যে দু’টি সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে প্রথমটি হল, ভারত এবং চিনের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত কর্তারা খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির নিরসনে নতুন মেকানিজম তৈরি করবেন ভারত এবং চিনের বিদেশসচিবরা।

আজকের আলোচনায় দক্ষিণ চিন সাগরের বিষয়টি বেজিং আদৌ তোলেনি বলেই দাবি করেছেন ভারতীয় কর্তারা। যেমন তোলেনি সিনহুয়ার তিন সাংবাদিকের ভারত থেকে বহিষ্কারের বিষয়টিও। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায় বিরুদ্ধে যাওয়ায় যথেষ্ট চাপে রয়েছে চিন। এ ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা পাওয়াটা তাদের জন্য জরুরি। কিন্তু তা নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে, আগে ভারতের কিছুটা উপশমের কৌশল নিয়ে চলছে বেজিং। আগামী মাসে গুয়াংঝৌয়ে জি-২০-র পার্শ্ব বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায়, চিন এই নিয়ে সরব হবে বলেই অনুমান করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন