‘মৃত্যুকূপ’ থেকে অবশেষে দেশের মাটিতে উজমা

ঘরে ফিরলেন ঘরের মেয়ে।পরনে হলুদ সালোয়ার। সবুজ ওড়না। বৃহস্পতিবার ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে এসে নিচু হয়ে ভারতের মাটি স্পর্শ করলেন উজমা আহমেদ। ঘুচল ভিন্‌দেশে বন্দিদশা, তিন সপ্তাহের টানাপড়েন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০৪:০৩
Share:

ফেরা: দেশে ফিরে মেয়েকে জড়িয়ে কান্না উজমা আহমেদের। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি।

ঘরে ফিরলেন ঘরের মেয়ে।

Advertisement

পরনে হলুদ সালোয়ার। সবুজ ওড়না। বৃহস্পতিবার ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে এসে নিচু হয়ে ভারতের মাটি স্পর্শ করলেন উজমা আহমেদ। ঘুচল ভিন্‌দেশে বন্দিদশা, তিন সপ্তাহের টানাপড়েন।

আর সেই উজমা পরে সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘পাকিস্তান একটা মৃত্যুকূপ। সেখানে যাওয়া সহজ, কিন্তু ফেরা যায় না।’’ পাকিস্তানে বেড়াতে যাওয়া উজমাকে পাক নাগরিক তাহির আলি বন্দুক দেখিয়ে বিয়ে করেছিলেন বলে অভিযোগ। পালিয়ে এসে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেন উজমা। গত দিন কুড়ি ছিলেন সেখানেই। বুধবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাঁকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়।

Advertisement

কূলভূষণ মামলা, নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনার জেরে এই মুহূর্তে তলানিতে ভারত-পাক সম্পর্ক। তা সত্ত্বেও মানবিকতার খাতিরে উজমাকে দেশে ফেরানোর জন্য পাক প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এ দিন তিনি টুইট করেছেন, ‘‘ভারতের মেয়েকে বাড়িতে স্বাগত। ওঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য আমি দুঃখিত।’’

দিল্লির মেয়ে উজমার সঙ্গে তাহিরের আলাপ মালয়েশিয়ায়। অন্য একটি সূত্রের দাবি, তাঁদের আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। গত ১ মে উজমা পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোওয়া প্রদেশের বুনের জেলায় গিয়েছিলেন তাহিরের সঙ্গে দেখা করতে। অভিযোগ, ৩ মে সেখানেই বন্দুক দেখিয়ে তাঁকে বিয়ে করেন তাহির।

দেশে ফিরে আজ উজমা বলেন, ‘‘সে এক অদ্ভুত গ্রাম। লোকগুলো অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে। প্রত্যেকের দু’তিনটে করে বৌ। বুনের-এর বেশির ভাগ লোকই মালয়েশিয়ায় কাজ করে। সেখান থেকে মেয়ে নিয়ে আসে। ওখানে আর তিন-চারটে দিন থাকলে আমি বাঁচতাম না। হয় আমায় বিক্রি করে দিত, না হয় অন্য কাজে লাগাত।’’ উজমা জানান, কথা মতো না চললে দিল্লিতে তাঁর মেয়েকে অপহরণ ও খুনের হুমকি দিতেন তাহির। আগের পক্ষের এই মেয়ের কথা ভেবেই তিনি সই করেছিলেন নিকাহনামায়।

৭ মে কোনও মতে ইসলামাবাদে এসে ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেন উজমা। জানান, তাঁর পাসপোর্ট, অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্ত নথি আটকে রেখেছেন তাহির। হাইকমিশনের সাহায্যেই ১২ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দেশে ফেরার আবেদন জানান উজমা। বলেন, তাঁর আগেও বিয়ে হয়েছে। সেই পক্ষের একটি মেয়ে আছে। সেই মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তার জন্য তাঁকে ভারতে ফিরতে দেওয়া হোক। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাহিরও। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বুধবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মহসিন আখতার কয়ানি উজমাকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন। ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ফেরার সময়ে উজমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশও দেন তিনি।

আজ সীমান্ত পেরোনোর সময়ে উজমার সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় দূতাবাস কর্মীরা। ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল পাক বাহিনীও। পরে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে প্রণাম করেন উজমা। উজমার ভাই ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের কিছুই করতে হয়নি। সুষমা আমাদের ফোনে জানিয়েছিলেন, সরকারই ওকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করছে।’’

উজমার শুধু একটাই আক্ষেপ— ‘‘বিয়ে হয়ে ও দেশে যাওয়া সমস্ত মেয়েই খুব খারাপ আছে। অনেকেই কিন্তু পালাতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন