দিল্লির নজর এখন চিনের বস্ত্র বাজারে

নরেন্দ্র মোদী সরকারের লক্ষ্য, বস্ত্র রফতানিতে চিনের হাত থেকে আলগা হওয়া জমি দখল করা। গাঁধীনগরে বস্ত্রশিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া ২০১৭’-য় ১০৬টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে দেশের বস্ত্র শিল্পের বৈচিত্র্যসম্ভার তুলে ধরে সেই কাজটিই শুরু করে দিল বস্ত্র মন্ত্রক।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

আমদাবাদ শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

গাঁধীনগরে ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া ২০১৭’-য় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

কূটনীতিতে নয়াদিল্লিকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয় বেজিং। সীমান্তেও ভারতের জমিতে ঢুকে পড়ছে চিনা সেনা। এই নরমে-গরমে লড়াইয়ের মধ্যে চুপিসারে রফতানির বাজারে বেজিংয়ের সাম্রাজ্যে থাবা বসাতে চাইছে ভারত।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী সরকারের লক্ষ্য, বস্ত্র রফতানিতে চিনের হাত থেকে আলগা হওয়া জমি দখল করা। গাঁধীনগরে বস্ত্রশিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া ২০১৭’-য় ১০৬টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে দেশের বস্ত্র শিল্পের বৈচিত্র্যসম্ভার তুলে ধরে সেই কাজটিই শুরু করে দিল বস্ত্র মন্ত্রক। এই সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন। বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “ওঁদেরও তাক লেগে গিয়েছে এখানকার প্রদর্শনী দেখে।”

বস্ত্র রফতানিতে গোটা বিশ্বে চিন এখনও প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ভারত অনেক পিছনে। ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফরেন ট্রেড-এর অধ্যাপক রাকেশমোহন জোশী বলেন, “গত বছর চিনের বস্ত্র রফতানির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সেখানে ভারতের রফতানির পরিমাণ মাত্র ৩ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার।”

Advertisement

হাতে বোনা কার্পেটের জন্য ভারতের নাম সবাই জানে। কিন্তু সেই কার্পেটও কারখানায় যন্ত্রে তৈরি করে চিন পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারতকে।

আরও পড়ুন:সীমান্তে বাড়ছে সেনা, আস্থা দৌত্যেও

মোদী সরকার মনে করছে, চিনের অর্থনীতির বহর কমছে। আরও কমবে। ফলে রফতানিও কমছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে ভারত। আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান কুমারমঙ্গলম বিড়লার যুক্তি, “গত তিন বছরে চিনের রফতানি ২ হাজার কোটি ডলার কমেছে। ২০২২-এর মধ্যে চিন ৫ হাজার কোটি ডলারের রফতানির বাজার ছেড়ে দেবে। তার সুযোগ নিয়ে ভারত বিশ্বের বস্ত্র রাজধানী হয়ে উঠতে পারে।’’ একই যুক্তি নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানগঢ়িয়ার। তাঁর যুক্তি, “চিনে মজুরি ভারতের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি। চিনের শ্রমিকবাহিনীর বহরও কমছে। ফলে আশির দশকে চিন যে সুবিধা পেয়েছিল, এখন সেই সুযোগ ভারতের সামনে।”

চ্যালেঞ্জ হলো, ভারতের মতো বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলিও এই সুযোগ নিতে চাইছে। ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তারা। বাংলাদেশের রফতানি ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছুঁয়ে ফেলেছে। ভারতের চেয়ে মাত্র ৫০ কোটি ডলার কম। এখনও পর্যন্ত ভারত জোর দিয়ে এসেছে হস্তশিল্প, তাঁত ও পাটে। কিন্তু এখন এই সবের সঙ্গে পলিয়েস্টার, রেয়ন, সিন্থেটিকের মিশ্রণে তৈরি কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। এই ক্ষেত্রে চিন এখনও এগিয়ে। স্মৃতি বলেন, “সুতির সঙ্গে পলিয়েস্টারের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমরা দু’দিকেই জোর দিচ্ছি।”

মন্ত্রী এ কথা বললেও পলিয়েস্টার, রেয়নে ১৮ শতাংশ জিএসটি বসানোয় শিল্পমহল ক্ষুব্ধ। বস্ত্রশিল্পেও ৫ শতাংশ জিএসটি বসানোর বিরুদ্ধে আমদাবাদের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট শুরু করেছেন। এ নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি না দিলেও গাঁধীনগরে রসায়নমন্ত্রী অনন্ত কুমার আজ বলেন, “এর জন্য পেট্রোরসায়ন শিল্পের সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের আরও সমঝোতা জরুরি।”

গাঁধীনগরের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দুই মন্ত্রকের মধ্যে তালমিল রেখে চলার জন্য অফিসারদের একটি গোষ্ঠী তৈরি হবে। আসার কথা কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ গুজরাতে আসেননি। সম্ভবত বিক্ষোভের পরিবেশ এড়াতেই।

শিল্পমহলের বক্তব্য, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং চিনের বাজার দখল করতে হলে দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলতে হবে। ব্রিটেনের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসতে চাইছি। এখনও সময় মেলেনি। ব্রিটেনও আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সরকারি ভাবে কথা বলতে পারবে না ইইউ থেকে তাদের বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শেষ না হলে। তবে আমরা ঘরোয়া স্তরে আলোচনা শুরু করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন