গলেনি বরফ, তবু পাক বৈঠকে দিল্লি

ঠিক তিন বছর থমকে থাকার পরে ভারত এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীদের যে বৈঠক আজ ঘোষণা করা হল, তাকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছে বিদেশ মন্ত্রক। সেই সঙ্গে দাগিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, এই বৈঠক মানেই এমন নয় যে, রুদ্ধ হয়ে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক সামগ্রিক আলোচনা ফের শুরু হয়ে গেল! 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪০
Share:

ভারতের মধ্যপন্থা। ফাইল চিত্র।

এই ‘মোলাকাত’ স্রেফ ‘মোলাকাতই’!

Advertisement

ঠিক তিন বছর থমকে থাকার পরে ভারত এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীদের যে বৈঠক আজ ঘোষণা করা হল, তাকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছে বিদেশ মন্ত্রক। সেই সঙ্গে দাগিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, এই বৈঠক মানেই এমন নয় যে, রুদ্ধ হয়ে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক সামগ্রিক আলোচনা ফের শুরু হয়ে গেল!

ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেনার সম্পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ভারতকে আলোচনায় বসানোর জন্য চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি লিখে সামগ্রিক আলোচনা শুরুর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে আলাদা একটি চিঠি লিখে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে (চলতি মাসের শেষে) বৈঠকের আবেদন জানান। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ভারত সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে চটজলদি কূটনীতির খপ্পরে না পড়ে একটি মধ্যপন্থা নিয়েছে। অর্থাৎ দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের অনুরোধে দিল্লি রাজি হলেও এখনই কোনও রকম সামগ্রিক আলোচনা শুরু যে সম্ভব নয়, সেটি আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার। পাশাপাশি এই ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন যে, পাকিস্তান যে-হেতু সন্ত্রাসবাদ রফতানির প্রশ্নে কোনও পদক্ষেপই করছে না, তাই নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার প্রশ্ন নেই।

Advertisement

সামগ্রিক আলোচনা শুরু না-হলে শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকটির হঠাৎ প্রয়োজন কী— সেই প্রশ্ন আজ ঘুরপাক খেয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের সাংবাদিক সম্মেলনে। বিশেষ করে যখন পাক সেনার হামলায় সীমান্ত রক্তাক্ত।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ইমরান চিঠি লিখে, সেই চিঠি টুইট করে হইচই ফেলে বিষয়টিকে এমন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন যে, দিল্লির পিছিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। কিন্তু নিঃসন্দেহে বিষয়টি অস্বস্তির। গত কালই জম্মুর সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানের মাথা কেটে নিয়েছে পাক সেনা। আজ তাই বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ঘোষণার পাশাপাশি পাক ভূমিকার তীব্র নিন্দাও করতে হয়েছে রবীশকে। তিনি বলেছেন, ‘‘সীমাম্তে বর্বরোচিত কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শুধু আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয়, গোটা পরিস্থিতিকে বিষাক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ ঘটনাটি কড়া ভাবে তুলে ধরবে পাকিস্তানের কাছে।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বিএসএফ-কে বলেছেন এই ঘটনায় কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

ইমরানের চিঠিতে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তাবও বিশদে রয়েছে। এটাও ঠিক যে, এক বার আলোচনার টেবিলে বসলে (তা সে যে নামের মোড়কেই হোক না কেন) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠবেই। ভারত কী ভাবে সেই চাপ কাটিয়ে এগোতে পারে, এখন সে দিকেই তাকিয়ে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। ইমরান কুর্সিতে বসার পরে ভারত-নীতির প্রশ্নে পাকিস্তানের যে প্রধান সুবিধে হয়েছে তা হল, বহু-মেরুবিশিষ্ট কূটনীতি আপাতত সেই দেশে নেই। যা ছিল নওয়াজ শরিফের সময়ে। সেনা, আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং মোল্লাতন্ত্র এখন একই সুরে বাজছে। আগে এই শক্তিকেন্দ্রেগুলির মধ্যে মতভেদ থাকায় ভারত সেই সুযোগ নিয়ে কিছুটা নিজের মতো করে খেলে নিতে পারত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন