প্রবল চাপেও বুদ্ধি বাড়ে!
বর্ষশেষে মোদী সরকারের বিদেশনীতি প্রসঙ্গে এমন রসিকতাই চলছে কূটনৈতিক শিবিরে।
বিদেশনীতির প্রশ্নে গোটা বছর ধরে ক্রমশ পিছিয়েছে সাউথ ব্লক। তাই নতুন বছরে চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য নতুন চেষ্টা শুরু করছে মোদী সরকার। যার মূল কথা, কলসির কানা ছোড়াছুড়ি অনেক হল, এ বার চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রেম বিলানো হবে! বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী বছরের গোড়া থেকেই সীমান্ত, বাণিজ্য এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণের জন্য চিনের কূটনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক শুরু করতে চলেছে নয়াদিল্লি।
চিনের মেগা-যোগাযোগ প্রকল্প ওবর-কে প্রত্যাখ্যান করা থেকে দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্যের জন্য আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে জোট বাঁধা। ডোকলামে প্রবল পরাক্রম দেখানো থেকে শুরু করে পাকিস্তান-চিন আর্থিক করিডর নিয়ে চোখ রাঙানো। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের এই ধারাবাহিক, একবগ্গা এবং উগ্র চিন-বিরোধিতার লাইন নিয়ে গোটা বছর ধরে এগিয়েছে সাউথ ব্লক। পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল বেজিং-এর সঙ্গে আলোচনা চালানো নিয়ে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের পরামর্শ।
বর্ষশেষে নয়াদিল্লি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে চিনের সঙ্গে বিবাদ কূটনৈতিক হারাকিরির সামিল। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক যখন ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তখন বৈরিতার দ্বিতীয় দরজাটি খোলার মতো অবস্থায় নেই মোদী সরকার। এই প্রসঙ্গে ইদানীং সাউথ ব্লকে বারবার উঠে আসছে ইউপিএ জমানায় করা তৎকালীন বিদেশসচিব শিবশঙ্কর মেননের উক্তি। মেনন প্রায়শই বলতেন, ‘আপনার ঘরে একটি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি না পারেন তাকে চোখ বুজে অগ্রাহ্য করতে, না পারেন তার সঙ্গে শত্রুতায় যেতে।’’
চিন হল প্রতিবেশী অর্থনীতিতে সেই ‘সুপার পাওয়ার’, যার সঙ্গে মতবিরোধের জায়গাগুলিকে পৃথক বন্ধনীতে রেখে বাণিজ্যিক যোগাযোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছেন বর্তমান বিদেশসচিবও। এ বার সেই পথ ধরেই আগামী বছরের গোড়ায় দু’দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা বৈঠকে বসছেন। লক্ষ্য, আঞ্চলিক কোনও তৃতীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত-চিন জোট বেঁধে যৌথ উন্নয়ন এবং যোগাযোগ প্রকল্প গঠন করা। এর ফলে যেমন সেই তৃতীয় রাষ্ট্রটি উপকৃত হবে তেমনই সমান ভাবে উপকৃত হবে ভারত এবং চিন। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, এটি করা হবে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নির্ধারিত কাঠামো মেনেই। এ ছাড়াও সীমান্ত থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য — একের পর এক ক্ষেত্রে আদানপ্রদানের কথাও ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ একদফা আলোচনা সেরে ফেলেছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। বন্ধ থাকা সীমান্ত আলোচনাও শুরু হয়েছে। বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত এবং চিনের সুসম্পর্ক শুধু দু’টি দেশের নয়, গোটা এশিয়ার সুস্থিতি এবং উন্নয়নের জন্যই জরুরি।