ভোর সাড়ে তিনটে। ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ফেলে এল হাজার কেজির বোমা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে মঙ্গলবার সকালে এই খবর জানানোর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়েছে অভিযানের কয়েকটি ভিডিয়ো। তেমনই একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, অন্ধকারের মধ্যেই কোনও যুদ্ধবিমান থেকে আগুনের মালা ছড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গে মন্তব্য, ‘ভারতীয় বায়ুসেনা দেওয়ালি পালন করল।’ এবং হ্যাশট্যাগ সার্জিকাল স্ট্রাইক-২। কয়েকটি খবরের চ্যানেলেও ভিডিয়োটি দেখানো হয়েছে ‘পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিতে বায়ুসেনার বিমান হানা’ বলে। প্রায় একই শিরোনামে ভিডিয়োটি ইউটিউবে আপলোডও করা হয়েছে।
মজার বিষয় হল, পাকিস্তানের তরফেও এ দিন একই ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে পাকিস্তানের নাগরিকদের একাংশ দাবি করেছেন, ‘ভারতের ব্যর্থ বিমানহানার পরে মুজফ্ফরাবাদ ও নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায় পাক বায়ুসেনার তৎপরতা।’ কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, এটা মুজফ্ফরাবাদ নয়, ইসলামাবাদের ভিডিয়ো। তাঁদের আরও দাবি, এটা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মহড়া। এই ভিডিয়োর গায়ে কোনও দেশেরই সরকারি ছাপ নেই। অর্থাৎ, কোনও দেশই সরকারি ভাবে এই ভিডিয়ো প্রকাশ করেনি।
তাই প্রশ্ন হল, ভিডিয়োর সূত্র তা হলে কী? ফুটেজটি রাতারাতি এলই কোথা থেকে?
সংবাদমাধ্যমের একাংশ এর সত্যতা পরীক্ষা করেছে। তারা গুগলে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ চালিয়েছিল। খোঁজের শেষে দেখা গিয়েছে, মহম্মদ জোহাইব নামে এক ব্যক্তি ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এমনই একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি সেখানে দাবি করেছিলেন, এটি ওই সময়ে রাতে ইসলামাবাদে পাক বায়ুসেনার মহড়ার দৃশ্য। জোহাইবের দাবি ঠিক হোক বা ভুল, ভিডিয়োটি যে
দু’বছরের বেশি পুরনো, তা এর থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এটা জানার পরে সংবাদমাধ্যমের ওই অংশের দাবি, আজ সকাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের লোকজন এই ভিডিয়োটি দেখিয়ে যে দাবি ও পাল্টা দাবি করছিলেন, তা ঠিক নয়।
আরও একটি ভিডিয়ো সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিনের আলোয় পরপর ক্ষেপণাস্ত্র মেরে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু ঘাঁটি। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিয়োটি আপলোড করেছেন তাঁদের আবার দাবি, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের ছবি এটি।
গুগল-এ এই নিয়ে খোঁজ করতে গিয়েও সংবাদমাধ্যমের একাংশ দেখেছে, এটি একটি ভিডিয়ো গেমের অংশ মাত্র।
সংবাদ সংস্থা