বালাকোটের এরকমই এক জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। যেটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ছবি: এএফপি।
জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার জন্য অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা। চার পাশ ঘন জঙ্গলে ঘেরা। উল্টো দিকে ততোধিক কঠিন কাজ ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার পক্ষে। অত্যন্ত সঠিক খবর এবং নিখুঁত লক্ষ্যের মিশেল না থাকলে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার পরিবর্তে ভারতকেই হারাতে হতে পারত গর্বের যুদ্ধবিমান। তা-ও ঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রত্যাঘাতের জন্য বালাকোটকেই বেছে নিয়েছে বায়ুসেনা। কেন?
ভারত আসলে সরাসরি জইশ জঙ্গিদের হৃৎপিণ্ডটাই গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ২৩.৬ কিলোমিটার ভিতরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট হল ফিদায়েঁ জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের আখড়া। কয়েকশো আত্মঘাতী জইশ জঙ্গি বালাকোটের এই শিবিরগুলোতেই প্রশিক্ষণ নেয়। ভারতে যত আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই নিয়ন্ত্রণ হয়েছে এই জঙ্গি শিবির থেকেই, এমনটাই জানা গিয়েছে ভারতীয় সেনা সূত্রে।
ওই সূত্রটির মতে, মাসুদ আজহারের আগে এই জঙ্গি শিবির পরিচালনা করত হিজবুল মুজাহিদিন। সদ্য জঙ্গি দলে নাম লেখানোদের প্রথমেই নিয়ে আসা হত এই শিবিরে। মগজধোলাইয়ে পারদর্শী মাসুদ আজহার নিজে তাদের পাঠ দিত। তাদের উপর ধর্মীয় মতবাদ চাপিয়ে দিত সে। এর পর আসত তাদের অস্ত্রশিক্ষার পালা। শিবিরে ইউসুফ আজহার, মাসুদ আজহারের দাদা ইব্রাহিম আজহার এবং ভাই তলহা সইফের মতো একাধিক প্রশিক্ষক ছিল (বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতে এই তিন জঙ্গিই মারা গিয়েছে)। তারা নিখুঁত ভাবে অত্যাধুনিক অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী করে তুলত ফিদায়েঁ জঙ্গিদের। ইম্প্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তৈরি করা, তার ব্যবহার, আত্মঘাতী বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এমনকি অত্যধিক দুর্গম পরিস্থিতিতে কী ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব, এই বালাকোটের শিবিরেই শিখে নিত জঙ্গিরা। পাশেই কানহার নদী থাকায় জলেও প্রশিক্ষণের সুবিধা পেত তারা জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: পরপর ৫টা বিস্ফোরণ! উড়ে এল পাক ফাইটার জেট, তারপর...
সম্প্রতি ভারতীয় গোয়ান্দাদের কাছে খবর আসে, ভারতে আরও জঙ্গি হামলার ছক কষছে জইশ। এমন একটা জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দিতে পারলেই খুব সহজে ওই সমস্ত জঙ্গি হামলা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। সে কারণেই বালাকোটকেই বেছে নিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
আরও পড়ুন: ২০ বছর পর বদলা! পাকিস্তানে ঢুকে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের চক্রীকে নিকেশ করল বায়ুসেনা