রাওয়ালকোটে হত ৩ পাক জওয়ান

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ফের হানা দিল্লির

শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে পুঞ্চের নৌশেরা-রাওয়ালকোট সেক্টরে পাল্টা আঘাত হানল ভারত। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে অভিযান চালালেন ভারতীয় সেনার ‘ঘাতক’ বাহিনীর কম্যান্ডোরা। তাতে তিন পাক সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি দিল্লির।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও সাবির ইবন ইউসুফ

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

ছবি: এএফপি।

শনিবার থেকেই ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজৌরি সেক্টরে পাকিস্তানের সেনার গুলিতে এক মেজর-সহ চার জওয়ানের হত্যার বদলা নিতে হবে। শুধু খোঁজ চলছিল, ‘প্রতিশোধ’ নিতে কোথায় পাল্টা হামলা হবে? কোথায় ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের তুলনায় সুবিধেজনক অবস্থানে রয়েছে?

Advertisement

শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে পুঞ্চের নৌশেরা-রাওয়ালকোট সেক্টরে পাল্টা আঘাত হানল ভারত। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে অভিযান চালালেন ভারতীয় সেনার ‘ঘাতক’ বাহিনীর কম্যান্ডোরা। তাতে তিন পাক সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি দিল্লির। আহত হয়েছেন এক পাক জওয়ান।

গত বছর উরির সেনাঘাঁটিতে হামলার পরে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল। ফের পরের বছরেই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোল ভারতীয় সেনা।

Advertisement

এ বার অবশ্য এই অভিযানকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে দাবি করছে না নরেন্দ্র মোদী সরকার। তা নিয়ে ঢাক-ঢোল পেটানো বা বাহবা কুড়নোরও চেষ্টা এখনও হয়নি। তার বদলে সামরিক পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘লোকালাইজ্‌ড ট্যাকটিকাল লেভেল অপারেশন’। ব্রিগেডিয়ার স্তরের অফিসারই এই অভিযানের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন বলেই সেনা সূত্রের দাবি। সরকারি ভাবে অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সেনার তরফে এই অভিযান নিয়ে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি।

সেনা সূত্রের বক্তব্য, এই অভিযানের একটাই উদ্দেশ্য ছিল। শনিবারের হামলার বদলা। পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে তোমরা মারলে আমরাও মারব। ছেড়ে কথা বলা হবে না।

কী ভাবে চালানো হল গোটা অভিযান?

সেনা সূত্রের খবর, সোমবার বড়দিনের রাতে এই অভিযানে সময় লেগেছে মেরেকেটে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট। আগেই কম্যান্ডোরা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে রাওয়ালকোট সেক্টরে ঢুকে আইইডি পুঁতে আসেন। পাকিস্তানের টহলদার বাহিনী যে রাস্তা ধরে টহল দেয়, সেখানেই আইইডি রেখে আসা হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে পৌঁছতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের ফলে পাকিস্তানি জওয়ানরা হতচকিত হয়ে গিয়ে এক জায়গায় জড়ো হয়ে যান। তাতে ভারতের কম্যান্ডোদের পক্ষে নিশানা করা আরও সুবিধে হয়ে যায়। অ্যাসল্ট রাইফেল, লাইট মেশিনগান থেকে গুলি চালানো হয়।

সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘একেবারে নির্দিষ্ট এলাকায়, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অভিযান হয়েছে।’’ সেনা সূত্রের ব্যাখ্যা, গত বছরের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে এক ডজন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছিল। এ বারের অভিযান অত বড় মাপের হয়নি। ভারতের কোনও জওয়ান এই অভিযানে আহত হননি বলেও সেনা সূত্রের দাবি।

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলার কথা স্বীকার করেনি পাকিস্তান। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের কার্যনির্বাহী ডেপুটি হাইকমিশনারকে ডেকে এই দাবি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, ভারতীয় সেনার গুলিবৃষ্টির মধ্যে সেনা নয় এমন কিছু ব্যক্তি (নন-স্টেট অ্যাক্টর) রাওয়ালকোট সেক্টরে আইইডি পুঁতেছিল। তাতেই তিন জন পাক সেনা নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের যে জওয়ানেরা মারা গিয়েছেন তাঁদের নাম সেপাই সাজ্জাজ, আব্দুল রহমান ও এম উসমান। আহত পাক সেনার নাম সেপাই আথাজ হুসেন। সকলেই পাকিস্তানের ৫৯ বালুচ ইউনিটের ১২ ডিভিশনের সদস্য।

শনিবার রাজৌরিতে মেজর-সহ চার জওয়ানের মৃত্যুর সময়ে ভারতীয় সেনা কোনও ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ লঙ্ঘন করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে দিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন