উমর ফয়েজ
যে অঞ্চল থেকে এখন হামেশাই শোনা যায় জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার কথা, সেখান থেকেই সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পুণের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি’ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গত ডিসেম্বরে যোগ দিয়েছিলেন রাজপুতানা রাইফেলস রেজিমেন্টে। প্রথম বার ছুটি নিয়ে বিয়েবাড়িতে এসে খুন হলেন সেনাবাহিনীর সেই তরুণ অফিসার উমর ফয়েজ। গত কাল গভীর রাতে সোপিয়ানের বাটপুরায় বিয়েবাড়ি থেকেই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে জঙ্গিরা।
কুলগামের বাসিন্দা এই তরুণ অফিসারের শেষযাত্রার সময়েও আবার পাথর ছোড়ে এক দল বিক্ষোভকারী। কিন্তু এলাকায় জনপ্রিয় তরুণ অফিসারের হত্যায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের দাবি, যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের শাস্তি দিতে হবে। উমরের মতো যুবককে খুন করে কোনও লাভ হয়নি।
বরাবরই ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত উমরের বাবা আপেলচাষি। কাশ্মীরের মেধাবী ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি স্কুল ‘নবোদয় বিদ্যালয়’-এ পড়াশোনা করেছেন তিনি। গত কয়েক মাস মোতায়েন ছিলেন জম্মুর আখনুরে। এক সম্পর্কিত ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন সোপিয়ানের বাটপুরায়।
আরও পড়ুন: কুলভূষণে স্বস্তি সাময়িক, চিন্তা বাড়ল ভারতের
উমরের আত্মীয়রা জানান, গত কাল রাত ন’টা নাগাদ বিয়েবাড়ির তিন তলায় হবু বরের সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন উমর। তখন দুই সশস্ত্র মুখোশধারী যুবক এসে তাঁকে বন্দুক দেখিয়ে বের করে নিয়ে যায়। বিয়েবাড়িতে হাজির অন্যরা বাধা দিতে গেলে সবাইকে খুন করার হুমকি দেয় তারা। তার পরে বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। যাওয়ার আগে হুমকি দিয়ে যায়, পুলিশকে খবর দিলে সবাইকে খতম করে দেওয়া হবে।
উমর ফিরে আসবেন ধরে নিয়ে রাতভর অপেক্ষা করেন সকলে। পুলিশকে খবর দেওয়ার সাহসও হয়নি কারও। আজ সকালে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হরমেন গ্রামে উমরের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বছর বাইশের ওই যুবককে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। আততায়ীদের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়েছিল বলেও মনে করা হচ্ছে।
খবর পেয়েই বিয়েবাড়ি ছেড়ে চলে যান অতিথিরা। পরে উমরের দেহ কুলগামে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শেষযাত্রায় যোগ দেন বহু স্থানীয় বাসিন্দা। এক দল যুবক শেষযাত্রা লক্ষ করে পাথর ছোড়ার চেষ্টা করে। তবে তাদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় শেষকৃত্য হয় উমরের। তাঁর প্রতিবেশী আকিব আলতাফ, মহম্মদ আবদুল্লাদের মতে, এমন হত্যাকাণ্ড অর্থহীন। সেনায় যোগ দেওয়া ভাল ছাত্র উমর এলাকার যুবকদের কাছে আদর্শ ছিলেন। তাঁর খুনিদের শাস্তি দিতে হবে।
হত্যাকাণ্ডের দায় নেয়নি কোনও জঙ্গি সংগঠন। তবে পুলিশের ধারণা, এই ঘটনার পিছনে হিজবুল মুজাহিদিনের হাত রয়েছে। আততায়ীদের খোঁজে তাদের সমস্ত ইউনিটকে সক্রিয় হতে বলেছে দক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গি দমনের দায়িত্বে থাকা সেনার ‘ভিক্টর ফোর্স’।
ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন জম্মু- কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। রাহুলের মতে, ‘‘যারা উমরকে খুন করেছে শেষ পর্যন্ত তারাই পরাজিত হবে।’’