Sikkim Flash Flood

সাত দিনের ‘অভিযানে’ গ্রাম উদ্ধার সেনার

সেনা সূত্রের খবর, উত্তর সিকিমে চুংথাং থেকে আরও ১৫-১৬ কিলোমিটার উত্তরে রাবম নামে ছোট্ট গ্রামে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৪৫ জন বাসিন্দা আটকে ছিলেন।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২০
Share:

খাড়াই পাহাড়ে পথ তৈরি করে রাবাম গ্রামের দিকে এগোচ্ছেন সেনা জওয়ানেরা। সেনা সূত্রে পাওয়া ছবি।

টানা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের পথে হাঁটা। কখনও প্রায় খাড়াই পাহাড়ের গা বেয়েই রাস্তা তৈরি করে এগিয়ে চলা। দিনের বেলা কয়েক ঘণ্টা এ ভাবে চলার পরে কিছুটা বিশ্রাম, আবার চলা শুরু। রাতে সেই জঙ্গলেই কোথাও ক্যাম্প করে কাটানো। পরদিন সকালে আবার হাঁটা। এ ভাবে সাত দিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে তিস্তায় হড়পা বানে বিচ্ছিন্ন একটি প্রত্যন্ত গ্রামকে মূল সিকিমের সঙ্গে জুড়ল ভারতীয় সেনা। উদ্ধার করা হয়েছে আড়াইশো গ্রামবাসীকে।

Advertisement

সেনা সূত্রের খবর, উত্তর সিকিমে চুংথাং থেকে আরও ১৫-১৬ কিলোমিটার উত্তরে রাবম নামে ছোট্ট গ্রামে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৪৫ জন বাসিন্দা আটকে ছিলেন। ওই গ্রামেরই কাছে কুন্দন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যেও আটকে পড়েছিলেন ৯৭ জনের মতো কর্মী। মূল সিকিম থেকে বিপর্যয়ের বিচ্চিন্ন হয়ে পড়ে আশপাশের মিনসিথাং, চুবিনবিনের মতো গ্রামও। উত্তরবঙ্গ তথা গোটা সিকিমের দায়িত্বে আছে সেনার ত্রিশক্তি কোর। রবিবার বাহিনীর সুকনার সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আটকে পড়া কর্মীদের কাছ থেকে জরুরি বার্তা আসে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে। এর পরে ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর অবধি জওয়ানদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত দল হেঁটে ‘অভিযান’ চালিয়ে রাবম গ্রামে পৌঁছয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হেঁটে সাত দিনে প্রায় ১৪.৮ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ তৈরি করে ওই গ্রামে পৌঁছেছে সেনা। গ্রামের সবাইকে সুরক্ষিত ভাবেই উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এলাকার পৌঁছনোর সব রাস্তা, ছোট পাকদণ্ডী, সেতু হড়পা বানে ভেসে গিয়েছিল।

সেনা সূত্রের খবর, শুধু জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তা তৈরিই নয়। গত শনিবার রাবমে একটি অস্থায়ী সেনা হেলিপ্যাডও তৈরি করে ফেলেছে। রাবমের মাধ্যমে মিনসিথাং, চুবিনবিনের মতো গ্রামেও যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে সেনা। এলাকার কুন্দন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আটকে পড়া ৯৭ জনকেও উদ্ধার করা হয়েছে। মিনসিথাং থেকে সেনার অস্ত্র ভান্ডারের ডিপো তিস্তায় ভেসে গিয়েছে বলে খবর।

Advertisement

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অঞ্জনকুমার বসুমাতারি বলেন, ‘‘অত্যন্ত সাহসী এই মিশন পুরোপুরি সফল হয়েছে। বিরাট উচ্চতার পাহাড় ডিঙিয়ে অন্ধকার জঙ্গলে পথ তৈরি করে জওয়ানেরা রাবমে পৌঁছে গিয়েছেন। শুধু রাস্তা খুঁজে তৈরি করা নয়, পিঠে করে খাবার ও ওষুধও জওয়ানেরা নিয়ে যান। রাবমে পৌঁছেই দুর্গতদের মধ্যে খাবার ও ওষুধ বিলি করা হয়।’’ তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ আসারাও আটকে পড়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ভিন্‌রাজ্যের বাসিন্দাও আছেন।

সিকিম পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকে রবিবার বিকেল অবধি উত্তর সিকিম থেকে ২ হাজার ৬১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ পর্যটক। এখনও বিদেশি পর্যটকদের ১০ জনের একটি দল উত্তরে আছে। আজ, সোমবার তাঁদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হতে পারে।

এ দিকে, এখনও তিস্তা-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত ১২ জনের হদিশ মেলেনি। এঁদের মধ্যে কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ির দুই বাসিন্দা আছেন। উদ্ধার করা বাসিন্দা বা পর্যটকদের তালিকায় এঁরা আছেন কি না, তা দেখা হচ্ছে। কারণ, ঘটনার ৫৭ জনের নিখোঁজের খবর মিলেছিল। পরে তাঁরা নিরাপদে দক্ষিণ সিকিমে চলে গিয়েছেন বলে খবর আসে। এ দিন রাত অবধি সিকিমে মৃত সংখ্যা বেড়ে হয়ে ৩৮ জন। এখনও নিখোঁজ ৭৬ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন