স্থানীয় এক ইমামকে ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দিচ্ছেন ধর্মেন্দ্র যাদব। ছবি: পিটিআই।
হাসপাতালের ঝাড়ুদার। এক বার করে মেঝে পরিষ্কার করছেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই কেউ না কেউ এসে জায়গাটা নোংরা করে দিচ্ছেন। তিতিবিরক্ত সেই ঝাড়ুদার গজগজ করতে করতে সেই নোংরা আবার পরিষ্কার করছেন। হঠাৎই সাদা অ্যাপ্রন পরা লম্বা একটা লোক তাঁকে এসে জড়িয়ে ধরলেন। একটু পরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন সেই বৃদ্ধ ঝাড়ুদার। একটা ‘জাদু কি ঝাপ্পি’তে কত অসম্ভব কাজ সম্ভব হতে পারে তা দেখিয়েছিল ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। বিক্ষোভ-আন্দোলন আর গোলাগুলিতে বিদ্ধ দক্ষিণ কাশ্মীরে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত সেই ছবির ফর্মুলাকে এখন কাজে লাগাতে চাইছে ভারতীয় সেনা।
শুরুটা করেছেন কর্নেল ধর্মেন্দ্র যাদব। আদতে গুরুগ্রামের বাসিন্দা এই কর্নেল এখন কর্মসূত্রে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায়। ভোর হতে না হতেই জিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ধর্মেন্দ্র। যেতে যেতে যত গ্রাম পড়ে, দলবল নিয়ে নেমে পড়েন সেখানে। গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা যাতে ফের স্কুলে যায়, লেখাপড়া শুরু করে, আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। সেনা বলে অনন্তনাগ এখন গোটা জম্মু-কাশ্মীরের সব চেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা। সব চেয়ে অশান্ত জেলা। আর সেখানকার জীবনগুলোই এখন পাল্টাতে চাইছে সেনা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে খুলতে চাইছে স্কুল-দোকানপাট।
তিন মাস হতে চলল। কাশ্মীরে স্তব্ধ স্বাভাবিক জনজীবন। গত জুলাইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানি ও তার দুই সঙ্গীর। তার পর থেকে কার্ফু, বিক্ষোভ, মিছিল, পাথর আর ছররা দেখেছে ভূস্বর্গ। প্রাণ হারিয়েছেন আশিরও বেশি মানুষ। যাঁদের মধ্যে সেনার দিকে পাথর তাক করা পনেরো বছরের কিশোর যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও।
সেনার সঙ্গে আম কাশ্মীরির সম্পর্কের শীতলতা কারও অজানা নয়। আর সেই জায়গাটাতেই বদল আনতে চাইছেন ধর্মেন্দ্রের মতো সেনারা। ‘‘জেলার অনেকাংশেই এখন শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সেনা সত্যিই ভাল কাজ করছে’’, বললেন গুলাম মইনুদ্দিন। পেশায় শিক্ষক মইনুদ্দিনকে অস্থায়ী স্কুলে শিশুদের পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছে সেনাই। দল নিয়ে ধর্মেন্দ্র যখন গ্রামে গ্রামে ঘোরেন, সেখানকার স্থানীয় বয়স্করা মাঝেমধ্যেই জড়িয়ে ধরেন তাঁকে। তিনি সেটারই নাম দিয়েছেন ‘জাদু কি ঝাপ্পি’। বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগে মুন্নাভাই দেখেছি। ভালবাসা দিয়ে কত বড় যুদ্ধ জয় করা যায়, সেটা আমি ওই ছবিটা দেখেই শিখেছি।’’
অনন্তনাগের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় কর্নেল যাদব তাঁদের কত বড় ভরসা। তবে এই কর্নেলের আর একটা পরিচয়ও আছে। বুমডুরা গ্রামে সেনার যে বাহিনী বুরহান ওয়ানি আর তাঁর দুই সঙ্গীকে খতম করেছিল, কর্নেল যাদব ছিলেন তারই অন্যতম সদস্য।