ফের মোদী সরকারের পাশে দাঁড়াল বিশ্বব্যাঙ্ক। ফাইল চিত্র।
জিএসটি এবং নোটবন্দি নিয়ে হাঁসফাস অবস্থা মোদী সরকারের। বৃদ্ধির গতি বাড়া তো দূর, ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখানো সরকারের আমলে এই নিয়ে পর পর দু’বছর কমতে চলেছে আর্থিক বৃদ্ধির হার। এই অবস্থায় অর্থনীতির হাল কী ভাবে ফেরানো যায়, তা নিয়ে যখন অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বসতে চলেছে কেন্দ্র, তখনই আশ্বাসের হাত তুলল বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
বুধবারই ‘বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনা’ (গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্টস) সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সেই রিপোর্টের পূর্বভাস, আগামী অর্থবর্ষেই আবার ৭ শতাংশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এগিয়ে যাবে এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার। আগামী ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে এই রিপোর্টে।
তবে রিপোর্টের বাইরে, এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে যথেষ্ট উজ্জ্বল বলেই তুলে ধরলেন বিশ্বব্যাঙ্কের এক বড়কর্তা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বিশ্বব্যাঙ্কের ডেভেলপমেন্ট প্রসপেক্টস গ্রুপের অধিকর্তা আইয়ান কোসে বলেন, “আমাদের প্রায় সব রিপোর্টই বলছে যে, আগামী দশকে ভারতীয় অর্থনীতির উল্লেখজনক বৃদ্ধি ঘটবে। এখন হয়ত কিছুটা সমস্যা হতেও পারে, কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিতে অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে।”
কোসের মতে, যেখানে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে, সেখানে ক্রমেই চাঙ্গা হবে ভারতীয় অর্থনীতি। ২০১৭-১৮ সালে চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে যাচ্ছে ৬.৮ শতাংশ, যা হয়ত ভারতের চেয়ে ০.১ শতাংশ বেশি থাকবে। ২০১৮-১৯ সালে (অর্থাত্ আগামী অর্থবর্ষে) চিনের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৪ শতাংশ। এ সময় ভারতের বৃদ্ধির হার ৭.৩ শতাংশ হয়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস বিশ্বব্যাঙ্কের।
আরও পড়ুন: কোষাগারে টান, বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা, পরামর্শের সন্ধানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই
কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদই মনে করেন, চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হারের সঙ্গে ভারতের হারের তুলনা করাটা আর তেমন যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ চিনের অর্থনীতির আয়তন (নমিনাল জিডিপি*) এখন ১১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। সেখানে ভারত দাঁড়িয়ে আছে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি ডলারে।
এ পর্যন্ত মোদী সরকারের সব কটি বিতর্কিত অর্থনৈতিক পদক্ষেপকেই সমর্থন করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। নোটবন্দির পর, এ দিন বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তার মুখে শোনা গেল জিএসটি এবং ব্যাঙ্কিং সংস্কারেরও ভূয়সী প্রশংসা। কোসে বলেন, “ভারত সরকার পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে প্রচণ্ড সিরিয়াস। আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে জিএসটি এবং ব্যাঙ্কিং সংস্কারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
এই সেই রিপোর্ট।
বিশ্বব্যাঙ্ক আগামী ২০২০-২১ পর্যন্ত ভারতীয় অর্থনীতিতে যে বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখিয়েছে, তার সর্বোচ্চ হার হল ৭.৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালে ভারতের বৃদ্ধির হার পৌঁছেছিল ৮ শতাংশে। তার পরের অর্থবর্ষেই নোটবন্দি। হার এক ধাক্কায় নেমে আসে ৭.১ শতাংশে। চলতি অর্থবর্ষে এল জিএসটি। বৃদ্ধির হার আরও নেমে হতে যাচ্ছে ৬.৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, আগামী তিনটি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার হবে যথাক্রমে ৭.৩, ৭.৫ এবং ৭.৫ শতাংশ। অর্থাত্ ২০১৫-১৬তে বৃদ্ধির যে গতি লাভ করেছিল ভারতীয় অর্থনীতি, সেখানে ফিরে পৌঁছনোর সম্ভাবনা আগামী কয়েক বছরে দেখতে পাচ্ছে না বিশ্বব্যাঙ্ক। যদিও আগামী দশকে ভারতের বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের আশেপাশে থাকাকেই যথেষ্ট ভাল বলে মনে করছেন কোসে।
তবে আর্থিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে আরও জোর দিতে হবে বলেও মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। কোসে বলেন, “ভারতকে এখন শুধু বিনিয়োগের ক্ষেত্র আরও সহজ করতে হবে।”
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ
* () ()