ডিজেল না বিদ্যুৎ, ইঞ্জিন বিতর্কে রেল

রেলমন্ত্রী-সহ গোটা রেলবোর্ড চাইছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত ডিজেল ইঞ্জিন বসিয়ে দিয়ে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন চালাতে। কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদী সাশ্রয়। কিন্তু বাদ সাধছে রেলের নীতিই।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

রেল মন্ত্রকের নীতিগত অস্পষ্টতার কারণে এখন প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

Advertisement

রেলের ইঞ্জিন ডিজেলে চলবে না বিদ্যুতে? রেলমন্ত্রী-সহ গোটা রেলবোর্ড চাইছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত ডিজেল ইঞ্জিন বসিয়ে দিয়ে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন চালাতে। কারণ এতে দীর্ঘমেয়াদী সাশ্রয়। কিন্তু বাদ সাধছে রেলের নীতিই। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র রেখে অন্তত আগামী দশ বছরের জন্য এক হাজার ডিজেল ইঞ্জিন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে রেল। যা নিতেই হবে রেলকে। ফলে ইলেক্ট্রিক-ডিজেল বিতর্ক বনাম বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে এখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি দশা রেলের!

রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, আধুনিকীকরণের এই জমানায় ডিজেল ইঞ্জিন নেহাতই বোকামি। আবার দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পরে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি খেলাপ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে মুখ পুড়বে দেশের। শুধু যে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ধাক্কা খাবে তা নয়, চুক্তি খেলাপ করায় বিপুল আর্থিক গুনাগারও দিতে হবে রেল মন্ত্রককে। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ব্যক্তিগত ভাবে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনের পক্ষে। পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি আর্থিক সাশ্রয়ের কারণেও ডিজেল খাতে খরচ কমাচ্ছে রেল। এই অবস্থায় ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন বিতর্কে কী হবে, তা ঠিক করতে গত মাসেই বৈঠক হলেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে রেল।

Advertisement

আরও পড়ুন: লাইনে নজরদারি চলছে তো, নজর রাখতে জিপিএস

সমাধান সূত্রের খোঁজে রেলের পক্ষ থেকে জিই সংস্থার সঙ্গে ডিজেলের পরিবর্তে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন বানানো যায় কিনা, তা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় বসা হয়। জিই-র তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা কেবল ডিজেল ইঞ্জিন বানায় এবং এ দেশে আগামী দশ বছর ডিজেল ইঞ্জিন বানানোরই বরাত পেয়েছে। ক্ষুব্ধ সংস্থাটি জানিয়েছে, সরকার এ ভাবে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন করলে বিনিয়োগকারীদের সমস্যা হয়। তা ছাড়া ইতিমধ্যেই বিহারের কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে পাঁচ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারের অবস্থান বদলে তাদেরও চাকরি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছে সংস্থাটি।

দু’বছর আগে বিহারে ২৬০ কোটি টাকা মূল্যের ডিজেল ইঞ্জিন তৈরির কারখানা বানানোর বরাত পায় জিই। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে আগামী দশ বছরে মোট হাজারটি অর্থাৎ বছরে একশোটি ইঞ্জিন তৈরির বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ তারা। বর্তমানে ডিজেল খাতে রেলের খরচ হয় ১৬-১৮ হাজার কোটি টাকা। ওই অর্থ বাঁচাতে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন চালানোর পক্ষপাতী রেলের বড় অংশ। রেল কর্তাদের একাংশ বলছেন, লালু প্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রকল্পটি ঘোষণা করা হয়। পরিকল্পনা ছিল, ২০১০ সালের মধ্যে কারখানাটি চালু করে দেওয়া হবে। যাতে সেই সময় থেকে আগামী ১৫ বছর দেশের ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় ওই কারখানা। কিন্তু প্রায় এক দশক দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আপাতত সমাধান কোন পথে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দিকে তাকিয়ে রেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন