বিদেশমন্ত্রী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
ইরাকে অপহৃত ৩৮ জন ভারতীয়ের মৃত্যুর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তীব্র হয়ে উঠল রাজনৈতিক চাপানউতোর। যার জেরে বিড়ম্বনার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আজ সকালে এই ঘোষণার পর চর্তুদিক থেকে আক্রমণ এবং সমালোচনার মধ্যে পড়েছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার প্রশ্নে বার বার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে বিদেশ মন্ত্রককে। রাজ্যসভায় বক্তব্য পেশ করলেও লোকসভায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে এ নিয়ে কিছু বলতেই দেয়নি কংগ্রেস। শশী তারুরের মতো কংগ্রেস নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ওই ৩৯ জন বেঁচে রয়েছেন বলে গত সাড়ে তিন বছর ধরে কেন বার বার মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে সরকার? মৃতদের আত্মীয়েরা অভিযোগ তুলেছেন, সংসদে এমন মর্মান্তিক খবর শোনানোর আগে সরকারের উচিত ছিল তাঁদের খবর দেওয়া। কেন তা দেওয়া হল না ?
বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে সেই সময়ে ইরাকে আইএসের হাত থেকে পালিয়ে আসা হরজিত মাসিহ আজ ফের মুখ খুলে বলেছেন, ‘‘আমি ক্রমাগত বলে এসেছি যে আইএসের হাতে বাকিরা খুন হয়েছেন। আজ প্রমাণ হল আমি সত্যি বলেছিলাম।’’ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে প্রশ্ন করা হয় যে, মাসিহর বয়ানকে কেন মেনে নেওয়া হল না? তা হলে সাড়ে তিন বছর ধরে মৃতদের পরিবারকে এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হত না। সুষমা কিন্তু সাংবাদিকদের সামনে এবং রাজ্যসভায় দেওয়া বিবৃতি, দু’ক্ষেত্রেই পুরনো অবস্থানে অনড় থেকেছেন। দাবি করেছেন, হরজিৎ মিথ্যা বলেছেন। কিন্তু মিথ্যাচারের ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মন্ত্রক। রাহুল গাঁধী তাঁর টুইটে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জানিয়েছেন, ‘‘প্রিয়জন ঘরে ফিরে আসবেন এই আশা নিয়ে বুক বেঁধেছিল এই পরিবারগুলি। গভীর শোক জানাচ্ছি তাঁদের।’’ বিরোধী শিবির এ কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে ২০১৫ সালে সংসদে বিদেশমন্ত্রী লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, ওই ৩৯ জন নিরাপদে আছেন। প্রশ্ন উঠছে, কীসের ভিত্তিতে এতটা নিশ্চিত ছিল দিল্লি ?
আজ সকালে সুষমা স্থির করেন, সংসদ যে হেতু চলছে না, তাই বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করবেন। কিন্তু রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু সুষমাকে আশ্বস্ত করে বলেন যে বিদেশমন্ত্রীকে বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ করে দেবেন তিনি। বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসার পরে সাংবাদিক বৈঠকে বাতিল করে রাজ্যসভায় মসুল হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন সুষমা। কিন্তু লোকসভায় তিনি বলতে ওঠার পরই উত্তাল হয়ে ওঠে কংগ্রেস বেঞ্চ। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সাংবাদিক বৈঠক করবেন খোদ বিদেশমন্ত্রীই।
আরও পড়ুন: ইরাক থেকে ফিরছে ৩৮ দেহ
ভারতীয়দের মৃত্যু নিয়ে সুষমার সাংবাদিক বৈঠক কার্যত পরিণত হয় রাজনৈতিক আক্রমণে। দীর্ঘ সময় নিয়ে সুষমা আজ কংগ্রেসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্পিকার বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ায় নেতৃত্বে কংগ্রেস হাঙ্গামা করে গিয়েছে। এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে এত নিচু স্তরের রাজনীতি মেনে নেওয়া যায় না।’’