ব্যবসায় ভাটা, বাজেটে কিছু সুরাহার দাবি জেটলির কাছে

নোট-বাতিলের ধাক্কা নিয়ে শিল্পপতিরা এত দিন ঘরোয়া আলোচনায় নিজেদের উদ্বেগের কথা বলছিলেন। এ বার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে তাঁরা তাঁদের আশঙ্কাগুলির কথা জানালেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

বাজেটের প্রস্তুতি বৈঠক। শনিবার নয়াদিল্লিতে শিল্পমহলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।

নোট-বাতিলের ধাক্কা নিয়ে শিল্পপতিরা এত দিন ঘরোয়া আলোচনায় নিজেদের উদ্বেগের কথা বলছিলেন। এ বার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে তাঁরা তাঁদের আশঙ্কাগুলির কথা জানালেন।

Advertisement

বাজেটের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে বৈঠক করতে বসে, অর্থমন্ত্রী কার্যত আজ শিল্পমহলের ক্ষোভের মুখে পড়েন। ক্ষোভের কারণ, আচমকা পুরনো ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকার নোট বাতিলের ফলে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। রফতানি নির্ভর ক্ষেত্রগুলিতে কাজ বন্ধ। সামগ্রিক ভাবে এই পরিস্থিতির ধাক্কা এসে লাগবে দেশের অর্থনীতিতে। স্বল্প মেয়াদে হলেও সেই ধাক্কা সামলাতে হবে শিল্পমহলকেই। অথচ বাজারে কেনাকাটা কমে যাওয়ায় মার খাবে উৎপাদন। নতুন লগ্নির জন্য মোদী সরকার যখন হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে, তারই মধ্যে শিল্পপতিরা তাই জেটলিকে জানিয়ে দিলেন, কারখানায় উৎপাদন মার খেলে নতুন লগ্নিতে কেউই উৎসাহ দেখাবে না।

এই সমস্যার দাওয়াই হিসেবে বাজেটে একগুচ্ছ পদক্ষেপের দাবি তুলেছে শিল্পমহল। যার মধ্যে রয়েছে কর্পোরেট করের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং অলাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের মতো সাহসী পদক্ষেপ। শিল্পমহলের যুক্তি স্পষ্ট, সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান কমে গিয়েছে। কেনাকাটা, উৎপাদন, রফতানি ও নতুন লগ্নির সম্ভাবনা— কমছে সবই। ফলে চলতি অর্থ বছরের শেষ পর্যায়ে এবং আগামী অর্থ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে। অর্থনীতির রথের এই চারটি ঘোড়াকে চাঙ্গা করতে সরকারকেই কিছু জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে।

Advertisement

আর্থিক বৃদ্ধির হার যে কমবে, দু’দিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজও পঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লি চেম্বার অব কর্মাসের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখন আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৭.৫ শতাংশের মধ্যে হলেও বৃদ্ধির এই হার ধরে রাখতে লগ্নির হার আরও বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে পরিকাঠামো ক্ষেত্র এবং রফতানিকে চাঙ্গা করতে।

আশা করা হয়েছিল, আজ বণিকসভার অনুষ্ঠানেও নোট বাতিল নিয়ে মুখ খুলবেন মনমোহন। কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি তিনি। অর্থনীতির বিষয়ে মনমোহন কংগ্রেসের বড় হাতিয়ার। বারবার ও যত্রতত্র একে ব্যবহার করে ভোঁতা করে ফেলতে চায় না কংগ্রেস। দলের নেতারা বলছেন, মনমোহন সংসদে যে সব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলিরই জবাব এখনও দিয়ে উঠতে পারেনি মোদী সরকার। বারবার মনমোহন মুখ খুলবেন না। তাঁর তোলা প্রশ্ন নিয়ে কংগ্রেস নেতারা বারবার সরব হবেন। আঙুল তুলবেন নোট বাতিলের ফলে তৈরি হওয়া অস্থিরতার দিকে।

মনমোহন এ দিন নোট বাতিলের প্রসঙ্গে না গেলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন, দারিদ্র কমানো এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অস্থিরতা নয়। আজ শিল্পমহলও জেটলির কাছে এই অস্থিরতার ওষুধই চেয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে শিল্পপতি রাজন মিত্তল বলেন, ‘‘আমার মনে হয় সরকার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছে। স্বল্প মেয়াদে যে ব্যথা রয়েছে, তা-ও তাদের ভাল ভাবেই জানা।’’ তিনি জানান, এখন কেনাকাটা, উৎপাদন, নতুন লগ্নিকে চাঙ্গা করতে কী করা যায়, সেটা দেখা দরকার। আজ এই নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কর্পোরেট করের হার কমানোরও এটাই সময় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মোদী সরকার আড়াই বছর ক্ষমতায় এলেও দেশীয় শিল্পপতিদের বড় মাপের নতুন লগ্নি এখনও অধরা। জেটলি আজ ফের শিল্পমহলের কাছে নতুন লগ্নির জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। গত বাজেটে কর্পোরেট করের হার ধাপে ধাপে ৩০ থেকে ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।

কিন্তু শিল্পমহল দাবি তুলেছে, সব সারচার্জ-সেস যোগ করে কর্পোরেট করের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। তার বদলে অন্যান্য কর ছাড় তুলে নেওয়া হোক। কমানো হোক ম্যাট (মিনিমাম অল্টারনেট ট্যাক্স)-এর হার। সিআইআই দাবি তুলেছে, লগ্নিতে জোয়ার আনতে ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ বা বিলগ্নিকরণ করা হোক। ফিকি-র সভাপতি হর্ষ নেওটিয়ার যুক্তি, ব্যক্তিগত আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমাও বাড়ানো দরকার।

রফতানিকারী সংস্থাগুলির সংগঠন ফিও-র সভাপতি এস সি রলহন বলেন, ‘‘এখন শ্রমিক-মজুরদের বেতন মেটানোই সমস্যা হয়ে গিয়েছে। অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। যারা ছোট চাষি বা হস্তশিল্পীদের থেকে পণ্য কেনেন, তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাঁচামাল ও তৈরি পণ্য পরিবহণে দেরি হচ্ছে। আমরা চাই, রফতানি চাঙ্গা করতে একটি তহবিল তৈরি করুক সরকার।’’

শিল্পমহলের উদ্বেগ ও আর্জি

• স্বল্প মেয়াদে হলেও ধাক্কা খাচ্ছে দেশের অর্থনীতি

• কেনাকাটা, উৎপাদন, নতুন লগ্নি, রফতানি কমছে

• কর্পোরেট করের হার কমিয়ে ১৮% করা হোক

• কমানো হোক ম্যাট

• বাড়ানোর হোক আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা

• ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ বা বিলগ্নিকরণ

• রফতানি চাঙ্গা করতে গড়া হোক বিশেষ তহবিল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন