ধর্ষণ জেনেও কর্তৃপক্ষ নীরব কেন, উঠছে প্রশ্ন

অফিসের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের পর কেটে গিয়েছে তিন দিন। পুলিশে অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়েছে অপরাধীরা। কিন্তু তার পরও ভয়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না তথ্য প্রযুক্তি শহর পুণে। শুধু এই অপরাধই নয়, সব জেনেও সংস্থার তরফে যে ভাবে গোটা বিষয়টি গোপন রাখা হয় , তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হচ্ছে পুলিশ কর্তাদের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

পুণে শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৬
Share:

অফিসের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের পর কেটে গিয়েছে তিন দিন। পুলিশে অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়েছে অপরাধীরা। কিন্তু তার পরও ভয়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না তথ্য প্রযুক্তি শহর পুণে। শুধু এই অপরাধই নয়, সব জেনেও সংস্থার তরফে যে ভাবে গোটা বিষয়টি গোপন রাখা হয় , তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হচ্ছে পুলিশ কর্তাদের।

Advertisement

সবে এক মাস হয়েছে ইনফোসিসের কাজে যোগ দিয়েছেন ধর্ষিতা তরুণী। মহারাষ্ট্রেরই যবতমল থেকে ক’মাস আগে কাজের খোঁজে পুণে শহরে এসে সংসার পাতেন ওই দম্পতি। ইনফোসিস ফেজ-১-এ ক্যান্টিনের হিসেবরক্ষকের চাকরি জোগাড় করেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী। আর কাছেই অন্য এক সংস্থায় পিওনের কাজ করেন তাঁর স্বামী। নতুন শহরে এসে যে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হতে পারে, এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁদের।

হাতে গুণে মিনিট পনেরো-কুড়ি। তার মধ্যেই জীবনটা কী ভাবে বদলে গেল, সে কথাই বুধবার নিজের মুখে জানালেন ওই তরুণী। রবিবার তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা হবে। কাজ থেকে খানিক বিরতি নিয়ে মহিলাদের শৌচাগারে ঢোকেন তিনি। বেসিনে হাত ধুচ্ছিলেন, সে সময় পেছন থেকে গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যান্টিনেরই সাফাইকর্মী পরিতোষ বাগ। শৌচাগারের মধ্যেই চলে ধর্ষণ। যন্ত্রণায়, আতঙ্কে যখন পাগলের মতো চিৎকার করছেন, সে সময় দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে আর এক সহকর্মী— প্রকাশ মহাদিক। চেনা মুখে দেখে যেন সাহসটা ফিরে এসেছিল। ওই অবস্থাতেই কোনও রকমে বলেন, ‘‘আমি তো বোনের বয়সি। দয়া করে বাঁচাও।’’ সাহায্য তো আসেইনি, উল্টে ভিতর থেকে দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে শুরু করে প্রকাশ। সব শেষে, দু’জনে মিলে রীতিমতো হুমকি দেয়, পুলিশে খবর দিলেই ফাঁস হয়ে যাবে ধর্ষণের ভিডিও।

Advertisement

এর পর আর কাজে ফিরে যাননি ওই মহিলা। বাড়ি যাবেন বলে স্বামীকে খবর দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন দরজার সামনে। সে সময় কাছেই এক মহিলা নিরাপত্তা রক্ষীকে দেখে আর চেপে রাখতে পারেননি ক্ষোভ। গোটা অফিসে খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। শেষে তাঁকে অফিসে ডেকে পাঠিয়ে বাড়ি যাওয়ারই পরামর্শ দেন কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামীকে সব খুলে বললে তিনিই নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পর সোমবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ধর্ষিতা তরুণী।

এক ঘণ্টার মধ্যেই ধরা পড়ে পরিতোষ ও প্রকাশ। রবিবার এত কাণ্ডের পরেও সোমবার দিব্যি অফিসে হাজির তারা। আর এতেই অবাক পুলিশ কর্তাদের একাংশ। কারণ ধর্ষণের অভিযোগ শোনার পর কর্তৃপক্ষ পুলিশে যাননি। এমনকী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপও করেননি। ধর্ষিতা নিজে পুলিশের কাছে আসার পরই সামনে আসে ঘটনাটি।

ইনফোসিসের তরফে অবশ্য পরে জানানো হয়, তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। এমন অপরাধ সহ্য করার প্রশ্নই নেই। ধৃতেরা ঠিকাকর্মী হলেও তাদের জন্য সংস্থার নিয়ম-কানুন সব এক।

ইনফোসিস কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুন না কেন, পুণের মতো হাই-টেক শহরে এত বড় একটা সংস্থা ধর্ষণের কথা জেনেও প্রথমে কেন নীরব রইল— সেই প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। মেয়েদের নিরাপত্তার ফাঁক ফোঁকড়গুলি এ ভাবে বেআব্রু হয়ে পড়ায় চিন্তিত শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন