ভোজে দিল্লি, জুনেইদ-হারা গ্রাম নেই ইদে

ইদের মুখেই খুন হয়েছে এই গ্রামের কিশোর জুনেইদ। তার ব্যাগে গোমাংস থাকার অভিযোগ তুলে চলন্ত ট্রেনে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। দিল্লি থেকে অল্প দূরে হরিয়ানার এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৪:৪৯
Share:

বিরিয়ানির গন্ধ উধাও। মিষ্টি দেওয়া-নেওয়ারও বালাই নেই। সকলের হাতে কালো ফেট্টি। এ বছর ইদের খুশি নেই বল্লভগড়ের খান্ডওয়ালি গ্রামে।

Advertisement

ইদের মুখেই খুন হয়েছে এই গ্রামের কিশোর জুনেইদ। তার ব্যাগে গোমাংস থাকার অভিযোগ তুলে চলন্ত ট্রেনে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। দিল্লি থেকে অল্প দূরে হরিয়ানার এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে দেশে মুসলিমদের সব থেকে বড় সংগঠন জমিয়তে-উলেমা-এ-হিন্দ বাতিল করেছে ‘ইদ মিলন’ অনুষ্ঠানও। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের অবশ্য হেলদোল নেই এতে। আজ ইদের দিন মোদী সরকারের সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি ও বিজেপির আর এক নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের বাড়িতে ঢালাও ভোজের আয়োজন হয়। সেখানে হাজির ছিলেন তাবড় তাবড় নেতারা। অরুণ জেটলি, ধর্মেন্দ্র প্রধান, রবিশঙ্কর প্রসাদ, প্রকাশ জাভড়েকর থেকে বাবুল সুপ্রিয়— সকলেই পালন করলেন খুশির ইদ।

নরেন্দ্র মোদী সব বিষয়ে টুইট করলেও জুনেইদের মৃত্যু নিয়ে কিছুটি লেখেননি। যেমনটি করেননি বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে পুলিশের গুলি ও লাঠির ঘায়ে কৃষকদের মৃত্যুর পরে। ছোঁননি রাজ্যে রাজ্যে কৃষকদের আত্মহত্যার প্রসঙ্গও। এমনকী, গত কাল রেডিওতে ‘মন কি বাত’-এও এই সব প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। রাজধানীতে আজ বিহার ও উত্তরপ্রদেশের দুই বিজেপি নেতার ঢালাও আয়োজন দেখে কে বলবে, সদ্য ক’দিন আগেই দিল্লির কাছেই ঘটে গিয়েছে এমন ঘটনা?

Advertisement

মন্ত্রীদের গায়ে কী কোনও আঁচ লাগেনা? প্রশ্নটা উঠছেই। যার জবাবে রবিশঙ্কর প্রসাদ বললেন, ‘‘কে বলল? গোটা ঘটনার তীব্র ভৎর্সনা করছি। আমাদের সরকার এই ধরনের ঘটনা একদম বরদাস্ত করে না। আপনারাও দেখেছেন, হরিয়ানা সরকার দোষীদের ধরতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীও এর আগে বলেছেন, গোরক্ষার নামে যারা তাণ্ডব করছে, তাদের শাস্তি দিতে।’’ আর ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা বলছেন, দিল্লিতে এই নিয়ে হই-চই করে লাভ কী? এখনও স্পষ্ট নয়, চলন্ত ট্রেনে আসন নিয়ে ঝগড়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে নাকি গোমাংসের অভিযোগ নিয়ে। হরিয়ানা সরকার আগে তদন্ত করুক, তার পর দেখা যাবে।

আরও পড়ুন: খুশির ইদের দিনেও উত্তপ্ত কাশ্মীর

কিন্তু জমিয়তে-উলেমা-এ-হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মাদানির মতে, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে। সে কারণেই ‘ইদ মিলন’ বাতিল করা হয়েছে। কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বিজেপির আমলে গণতন্ত্রের জায়গা নিয়েছে ভিড়তন্ত্র। সংখ্যালঘু, দলিত, গরিব, মহিলাদের উপরে আক্রমণ এখন নিত্যদিনের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ব্যক্তির শাসনে দেশে বহুত্ববাদ এখন সঙ্কটে।’’

বিরোধীদের এ-ও বলছেন, যে মোদী কোনও দিন ইফতার দিলেন না, তিনি আজ আমেরিকায় এমন এক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করছেন, যিনি ক্ষমতায় এসেই হোয়াইট হাউসের ইফতারের এত দিনের প্রথা তুলে দিলেন এ বার। আগে দিল্লিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইজরায়েল দূতাবাসও ইফতারের আয়োজন করত। এখন বদলে যাওয়া হাওয়ায় তারাও সেটি বন্ধ রেখেছে। আর এই আবহ তৈরি করছে মোদী সরকারই। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ইফতারেও কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী যাননি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও আজ ইদের কোনও উৎসবে যাননি। সরকারের তরফে পাঠিয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী দীনেশ শর্মাকে। এ দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আজ প্রস্তাব নিয়েছে, দেশের সংখ্যালঘু কমিশনটাই তুলে দিতে হবে। তাদের ‘অপরাধ’ সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের খবর দিতে একটি হেল্পলাইন চালু করেছে তারা। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন, যে ভাবে দেশ জুড়ে আরএসএসের কর্মসূচি চলছে, তাতে তাঁর কথা নেহাতই প্রতীকী হয়ে থেকে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন