আর্থিক সংস্কারের প্রথম বড় পদক্ষেপ করার পথে সাবধানী নরেন্দ্র মোদী সরকার এক কদম পিছিয়ে গেল।
বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিরজন্য দরজা আরও খুলে দিতেসোমবার রাজ্যসভায় বিমা বিল নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু বিল পেশের আগে পরিস্থিতি জটিল হয়েউঠেছে। কংগ্রেস, তৃণমূল থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলি বিলের বিরোধিতা করছে। অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলে সঙ্ঘের বিমা কর্মচারী সংগঠন সোমবার অন্যদের সঙ্গে বিমা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে। এই অবস্থার ভিতরে রবিবার রাতে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত, সোমবার বিমা বিল আনা হবে না। আগামিকাল বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী এম বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তার পর মঙ্গলবার বিলটি আনার চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া।
সংসদে তৃণমূল থেকে শুরু করে কংগ্রেস, এডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, বাম-সহ মোট ১১টি দল বিমা বিলের বিরোধিতা করছে। তৃণমূল ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিলটিকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলা হয়েছে। সোমবার সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধী দলের নেতাদের বৈঠকে আহ্বানজানিয়েছেন বেঙ্কাইয়া।
তিনি বলেন, “আমি সব বিরোধী দলের কাছে, বিশেষ করে কংগ্রেসের কাছে এই বিল পাশে সাহায্যের জন্য আবেদন করছি। বিমা ক্ষেত্র লগ্নির অভাবে ধুঁকছে।” ইউপিএ-সরকারই দীর্ঘদিন ধরে বিমায় বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন বিরোধিতা করার পিছনে কংগ্রেসের যুক্তি, পুরনো বিলের সঙ্গে মোদী সরকারের বিলের বিস্তর ফারাক রয়েছে। বেঙ্কাইয়া জানিয়েছেন, কংগ্রেসের দিক থেকে কোনও পরামর্শ এলে তা খতিয়ে দেখতে সরকার তৈরি। তৃণমূলের তরফে ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা পুরোপুরি এই বিলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তৃণমূল অন্যান্য দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে।
বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিজু জনতা দল অবশ্য বিলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে রাজ্যসভায় বিল পাশ করানো মোদী-জেটলির পক্ষে কঠিন হবে। কারণ ২৪২ সদস্যের রাজ্যসভায় এনডিএ-র কাছে রয়েছে ৫৯ জন সদস্য। এর সঙ্গে বিজু জনতা দলের ৭ জনকে জুড়লে বিলের পক্ষে ৬৬ জনের সমর্থন মিলবে। কিন্তু বিল পাশ করাতে প্রয়োজন ১২২ জনের সমর্থন। ফলে সকলের চোখ মুলায়ম ও মায়াবতীর দলের দিকে।
বিজেপি আশা করছে, সমাজবাদী পার্টি বিমা বিলের বিরোধিতা থেকে সরে আসতে পারে। কারণ সেবি বিল নিয়ে সমাজবাদী পার্টির যে সব আপত্তি ছিল, সে গুলি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে মায়াবতী বিমা বিলের বিরুদ্ধে বলেই ডেরেক ও’ব্রায়েনকে জানিয়ে দিয়েছেন বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্র। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলির মনোভাব বুঝেই বিল নিয়ে এগোতে চাইছেন জেটলি-বেঙ্কাইয়া। কারণ, বিল আনার পর তা পাশ করাতে না পারলে সরকারের মুখ পুড়বে। বিজেপি নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে সঙ্ঘের বিমা কর্মচারীদের জাতীয় সংগঠন। বাম, কংগ্রেসের সঙ্গে জুড়ে থাকা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে তারাও সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় ধর্মঘটে যোগ দেবে। একে সমর্থন করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)-ও। বিএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় বলেন, “আমরা বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রস্তাবও পাশ করেছি। ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমা ক্ষেত্রের কর্মচারীরা। আমরা একে সমর্থন জানাব।”
তবে বিএমএস ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য কালকের ধর্মঘটেই থেমে থাকবে না। এআইটিউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “ধর্মঘটের পরে পরবর্তী রণকৌশল তৈরি করতে এই সপ্তাহেই সবাই মিলে বৈঠকে বসা হবে।”
চাপের মুখে বিজেপি নেতৃত্ব কংগ্রেসের কাছে সমর্থন চাইছেন। কারণ মনমোহন জমানায় ইউপিএ-নেতৃত্বই এই বিল পাশ করাতে চেয়েছিলেন। উল্টো দিকে কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপি কেন এর বিরোধিতা করেছিল, আগে তার জবাব দিক। বেঙ্কাইয়া বলেন, “কংগ্রেস রাজ্যসভায় বিলের প্রস্তাবগুলি নিয়ে আলোচনা চায়লেও আমরা রাজি। কিন্তু বিলটিকে আর সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর অর্থ নেই। স্থায়ী কমিটি এই বিলটি নিয়ে যথেষ্ট সময় ধরে আলোচনা করেছে।” কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির পাল্টা যুক্তি, “বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটি বিমায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করেছিল।” বিজেপি যেহেতু কংগ্রেসকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ দিতে চাইছে না, তাই কংগ্রেসও বিজেপিকে চাপে রাখতে চাইছে। মণীশের বক্তব্য, বিজেপি যে অতীতে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে এই সব বিল পাশ হতে দেয়নি, তা এখন স্পষ্ট।
বিমা বিল থেকে পিছিয়ে এলেও সেবি-কে অর্থলগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্ম দমনে ক্ষমতা দিতে সেবি সংশোধনী বিলটি সোমবারই লোকসভায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে মোদী সরকারের। পরের সপ্তাহে শ্রমিক ক্ষেত্রের সংস্কারের জন্য সেই সংক্রান্ত আইনগুলির সংশোধনী বিল আনা হবে।