গোখরোর কৌটো দেখাচ্ছেন লালন। মঙ্গলবার বিহারের সমস্তিপুরে। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি ফরমানে বিহারে মদ বন্ধ হতেই মাথায় হাত পড়েছিল রানা তপেশ্বর সিংহ ওরফে লালনের। সাড়ে তিন দশকের রুটিন। রোজ এক বোতল মদ না মিললে ঘুম আসবে কী করে?
প্রথম দিকে নেশার ট্যাবলেটে ‘কাজ’ চালানোর চেষ্টা করেন সমস্তীপুরের ওয়ারিসনগরের সারি গ্রামের লালন। নজর পড়ে গাঁজা, চরস, কফসিরাপেও। কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে? হঠাৎই খুঁজে পান নতুন উপায়।
১ হাজার টাকা দিয়ে সাপুড়ের কাছ থেকে কেনেন তরতাজা একটা গোখরো সাপ! বাড়ির পিছনের ঝুপড়িতে প্লাস্টিকের কৌটোর ভরে রেখে দেন সেটিকে। টের পাননি কেউ-ই।
প্রতি দিন একটা করে জ্যান্ত ব্যাঙ খেতে দিতেন পোষা গোখরোকে। ব্যাঙ না মিললে সেদ্ধ ডিম। তার পরই হাত ঢুকিয়ে দিতেন কৌটোয়। ‘আলতো’ একটা ছোবলেই যেন এক বোতল মদের নেশা।
সব কিছু চলছিল ঠিকঠাক। গত রবিবার হিসেবে গরমিল হয়ে যায়। বাড়ির কাজে কয়েক দিনের জন্য বাইরে ছিলেন লালন। ফেরেন রবিবার সকালে। খাবার না পেয়ে চটে ছিল গোখরোটি। কয়েক দিনে সেটির বিষথলিও ভরে উঠেছিল। নেশার ঝোঁকে সে সব ভুলে কৌটোয় হাত ঢুকিয়ে দেন লালন। জব্বর ছোবল বসায় সাপটি।
আরও পড়ুন:পেট্রোল নিয়ে হাইকোর্টে! কী করছিল পুলিশ
মুহূর্তে মাথা টলে যায় লালনের। ভেবেছিলেন, নেশাটা হয়তো একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। পেটপুরে জল খেয়ে স্নানে যান তিনি। টলমল পায়ে স্নানঘর থেকে বেরতেই বাড়ির লোকেরা দেখেন, গ্যাঁজলা বের হচ্ছে লালনের মুখ দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সমস্তিপুর হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বোঝেন, সাপে কামড়েছে লালনকে।
পরপর ১৮টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাঁকে। মঙ্গলবার অনেকটা সুস্থ হন লালন। চিকিৎসকদের প্রশ্নে সব কথা জানান। হতবাক হন সকলে। ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরেই কৌটো-বন্দি সাপটিকে মেরে ফেলেন লালনের পরিজনরা।
হাসপাতালের চিকিৎসক জয়কান্ত পাসোয়ান বলেন, ‘‘জীবনে এমন রোগী দেখিনি। দিনের পর দিন সাপের ছোবল খেয়ে নেশার কথা শুনে আমি তো অবাক!’’