ছাঁটের কারবারির মাথায় হাত বাহুবলী নেতাদের

খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল টুয়াম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এক ঠিকাদার দীপক সিংহ ওরফে পিন্টুকে। দীপক স্বপনবাবুকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন বলে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশকে জানায়

Advertisement

দিবাকর রায়

মোগলসরাই শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:১৮
Share:

নিহত স্বপন দে।

বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার খুনে শুধু ছাঁট মাফিয়া নয়, রাজনীতিরও হাত দেখছে পুলিশ। রাজ্যের শাসক দল বিজেপির এক বাহুবলী বিধায়ক ও তাঁর আত্মীয় এক নির্দল বিধানপরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘প্রত্যক্ষ মদতে’র বিষয়টিও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

Advertisement

খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল টুয়াম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এক ঠিকাদার দীপক সিংহ ওরফে পিন্টুকে। দীপক স্বপনবাবুকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন বলে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশকে জানায়। কিন্তু পুলিশের একটি সূত্রের খবর, আটক করার ঘণ্টাখানেকের মাথায় থানায় ফোন করেন বিজেপির এক বাহুবলী বিধায়ক। উত্তরপ্রদেশের তিন বারের ওই বিধায়ক তদন্তকারীদের ফোনে জানান, প্রমাণ ছাড়া কাউকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। তাঁরা যেন প্রমাণ জোগাড় করে পিন্টুকে জেরার কথা ভাবেন।

প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক চাপের কথা মানতে চাননি মোগলসরাই থানার আইসি শিবানন্দ মিশ্র এবং চান্দৌলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রনাথ দুবে। তবে তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক অফিসার জানিয়েছেন, কারা খুন করেছে, প্রাথমিক ভাবে তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক চাপে’র জন্যই কেউই ব্যবস্থা নিতে রাজি হচ্ছেন না। মুখে কুলুপ স্থানীয় বিজেপি নেতাদেরও। সম্প্রতি চান্দৌলি জেলায় দলের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ছেলে, নয়ডার বিধায়ক পঙ্কজ।
দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মাফিয়া-যোগের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি ‘কিছু জানেন না’। ফোনে পঙ্কজ বলেন, ‘‘ঘটনার বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নেব।’’

Advertisement

পুলিশেরই এক সূত্রের বক্তব্য, মোগলসরাই রেল ইয়ার্ডের ওয়াগন সারাইয়ে কয়েকশো কোটি টাকার ছাঁট বেরোয়। ওই বিধায়কের ‘মদতে’ই একটি চক্র ছাঁট বিক্রির দর ঠিক করা থেকে শুরু করে কাকে কতটা দেওয়া হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে। সূত্রের বক্তব্য, স্বপনবাবুদের সংস্থার কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা এক রেল অফিসার এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। মাস তিনেক আগে তাঁকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই আতঙ্কে ছিলেন স্বপনবাবু।

রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিধায়কের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পূর্ব উত্তরপ্রদেশের এক মাফিয়া ডন বলেই পরিচিত। বারাণসীর বাসিন্দা ওই ডন রাজ্য বিধান পরিষদের নির্দল সদস্যও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর প্রভাব চোখে পড়ার মতো। যদিও দলের রাজ্য নেতারা তাঁর নামে কোনও অভিযোগ জানাতে ভয় পান। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মায়াবতী জেলে পুরেছিলেন ডনকে। ক্ষমতাবদলের পর অবস্থা যে কে সেই।

যদিও স্বপনবাবু খুন হওয়ার পরে ওই মাফিয়া ডনের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছিল পুলিশ। কিন্তু এক ‘অজ্ঞাত কারণে’ ফিরে আসে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন