রামমন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন। ইতিমধ্যেই অতিথিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে রামজন্মভূমি ট্রাস্ট। রামমন্দিরের অন্দরমহল দেখার আগে সেই আমন্ত্রণপত্রের অন্দরমহল দেখল আনন্দবাজার অনলাইন। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, নিছক আমন্ত্রণপত্র নয়, আমন্ত্রিতদের কাছে সেটি পাঠানো হচ্ছে সংরক্ষণযোগ্য এক ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবেও।
জমকালো আমন্ত্রণপত্রের প্রথম পাতায় রয়েছে সিংহাসনে বসা রাম-সীতার ছবি। —নিজস্ব চিত্র।
আমন্ত্রণপত্রটি রয়েছে একটি গেরুয়া রঙের ব্যাগের ভিতর। ব্যাগের উপরে লেখা ‘রামমন্দির অযোধ্যা’। ব্যাগটি খুললে ভিতরে একটি কাঠের বাক্স। মাঝে রয়েছে রামের প্রতীক, হাতে ধরা তির-ধনুক। সঙ্গে সূর্য প্রতীক। আমন্ত্রণপত্রের বাক্সের উপরেও রয়েছে একই কথা লেখা ও প্রতীক আঁকা। পাশাপাশি রামমন্দিরের স্কেচ। আমন্ত্রণপত্রের বাক্সটি খুলতে হচ্ছে ছোট্ট একটি ছিটকিনি ঘুরিয়ে। যার মধ্যে আবার আঁকা হনুমানের গদা।
জমকালো আমন্ত্রণপত্রের প্রথম পাতায় সিংহাসনে বসা রাম-সীতার ছবি। পাশে রামের ভ্রাতা এবং পদতলে রামভক্ত হনুমান। সেই ছবির পরের পাতায় বাঁ দিকের অংশে রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আমন্ত্রণ। ডান দিকের পাতায় রয়েছে অযোধ্যার মাটির সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য ও রামচরিত মানসের আংশিক উল্লেখ। ওই পাতা উল্টোলেই দেখা যাবে একটি কাঠের বোর্ডে রামের বাণী এবং নীচের দিকে দু’টি অংশ। একটি অংশে রয়েছে কাচের ছোট্ট একটি শিশি। কাঠের ঢাকনা দেওয়া সেই শিশির ভিতরে রয়েছে অযোধ্যার মাটি। যার মুখ লাল সুতো দিয়ে বাঁধা। অন্য খোপে রয়েছে একটি তামার মুদ্রা। লেখা আছে, সেটির ওজন ১০ গ্রাম। মুদ্রার এক পিঠে রয়েছে খোদাই করা রামের মুখাবয়ব। অন্য পিঠে খোদাই করা রামমন্দিরের কাঠামো।
আমন্ত্রণপত্রের ডান দিকের পাতায় রয়েছে অযোধ্যার মাটির সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য ও রামচরিত মানসের আংশিক উল্লেখ। —নিজস্ব চিত্র।
একঝলকে দেখে মনে হচ্ছে, গোটা আমন্ত্রণপত্রেই প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি তুলে ধরতে চেয়েছেন রামমন্দির কর্তৃপক্ষ। দেবনাগরী হরফেও রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। তামার মুদ্রা এবং শিশিতে অযোধ্যার মাটির মধ্যেও রয়েছে ‘হিন্দু সংস্কৃতি’।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাছে আমন্ত্রণ পাঠাতে শুরু করেছে রামজন্মভূমি ট্রাস্ট। তবে বিরোধী শিবিরের অনেকেই সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে তাঁদের অপারগতার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। যেমন মঙ্গলবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, তিনি ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘যে যার ধর্মাচরণ করতেই পারে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী-সহ এমন অনেকে উপস্থিতিতে হতে চলেছেন, যাঁরা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষণায় মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের সংবিধানের বিরোধী। তাই আমি এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছি না।’’ রামজন্মভূমি ট্রাস্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকেও। ধরে নেওয়া হচ্ছে, তিনিও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন না। দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্তরের খ্যাতনামীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২০১৯ সালে অযোধ্যা মামলার রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। ঐতিহাসিক সেই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার ‘বিতর্কিত’ জমিতে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়। ২০২০ সালের ৫ অগস্ট রামমন্দিরের ভূমিপূজন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়েই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি তা হতে চলেছে। তার আমন্ত্রণপত্রে পৌরাণিক ছোঁয়া রাখলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।