পরীক্ষা দিতে ভরসা ভূস্বর্গের আইপিএস অফিসার

বই জোগানোর কাজে সোশ্যাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করেছেন রথ। টুইটারে ঘোষণাও করেছেন, ‘‘নিট, জেইই, ইউজিসি নেট কমার্স-এর মতো পরীক্ষার বই দরকার?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

বসন্ত রথ

জম্মু-কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়াদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্যের পথ দেখাতে উদ্যোগী হলেন এক আইপিএস অফিসার। পড়ুয়াদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা শুরু করেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত বিলি করেছেন হাজারেরও বেশি বই। কলা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি সমস্ত বিষয়ের বই-ই পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন তিনি। পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য যাদের কাছে উপযুক্ত বইপত্র নেই, তাঁদের খুঁজে বার করাই অগ্রাধিকার বসন্ত রথ নামে আইজিপি র‌্যাঙ্কের ওই অফিসারের।

Advertisement

বই জোগানোর কাজে সোশ্যাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করেছেন রথ। টুইটারে ঘোষণাও করেছেন, ‘‘নিট, জেইই, ইউজিসি নেট কমার্স-এর মতো পরীক্ষার বই দরকার? আগ্রহীরা নিজেদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সরাসরি মেসেজ করুন।’’ কুপওয়ারা, কুলগাম, অনন্তনাগ, পুলওয়ামা, শোপিয়ানের মতো জায়গা থেকে কোনও পড়ুয়া যদি বই নিতে আগ্রহী হন, সে ক্ষেত্রে রবিবার দুপুর একটা থেকে তিনটের মধ্যে শ্রীনগরে চশমাশাহি অঞ্চলে রথের সঙ্গে দেখা করছেন তাঁরা। এ জন্য পড়ুয়াদের কোনও প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হতে হবে না বলেও টুইটারে উল্লেখ করেছেন রথ। তবে অনেক পড়ুয়া মেল মারফতও নিজেদের প্রয়োজন জানাচ্ছেন রথকে।

গত বছর জম্মু ও শ্রীনগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে বেহাল ট্রাফিক ব্যবস্থাকে অভিনব পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করে প্রথম বার প্রচারে আসেন এই অফিসার। কাশ্মীরের বাসিন্দাদের একাংশ যেখানে প্রশাসনের প্রবল বিরোধী, রথের এই সামাজিক কর্মকাণ্ড সেখানে সেতুবন্ধনের কাজ করবে বলে মনে করছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের যুবসমাজের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন ওড়িশার এই অফিসার। তিনি মনে করেন, বড় শহরের পড়ুয়াদের মতোই প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়ারাও বেশ প্রতিভাবান। উপযুক্ত সম্পদের অভাবই তাদের এগোনোর পথে বাধা। রথের নিজের কথায়, ‘‘কম বয়স থেকেই পড়াশোনার প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আমার বইখাতা জোগাতে মাকে অভুক্ত থাকতে হয়েছে। সেই দিনগুলো ভুলতে পারি না।’’

Advertisement

শ্রীনগরের ভাসমান বাজারে বইয়ের স্টলও দিয়েছেন রথ। রবিবার সেখানে উপস্থিতও থাকেন। এই স্টলের বিশেষত্ব হল, কোনও বই পছন্দ হলে, বিনা বাক্যব্যয়েই সেই বই বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন যে কেউ। তবে যারা সেই স্টলে পৌঁছতে পারেন না, প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়াদের খোঁজ মিললে কুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে বই পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন তিনি। এত বই বিতরণের টাকা আসে কোথা থেকে? রথ জানিয়েছেন, অনেকেই অনুদান দেন। তবে প্রচারের আড়ালে থাকতে চান বলে তাঁদের নাম সামনে আনা হয় না। কেউ কেউ অবশ্য ফুট কাটছেন, রথ কাশ্মীরের পড়ুয়াদের মধ্যে বই পৌঁছে দিতে যতটা আগ্রহী, ততটা উৎসাহ দেখা যায় না জম্মুর প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়াদের জন্য। তবে এ সব সমালোচনা নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামাতে নারাজ রথ। রথের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এক যুবক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই জম্মুর বিভিন্ন অঞ্চলে বই পৌঁছে দিতে অনেকে যোগাযোগ করেছেন তাঁদের সঙ্গে। দ্রুত সমাধান করা হবে সেই সমস্যাও। ভবিষ্যতে গেট, ইউপিএসসি-র মতো পরীক্ষার জন্যও বই বিতরণ করতে চান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন