সিবিআই অধিকর্তার দৌড়ে প্রাথমিক ভাবে উঠে এসেছিল ১৯৮৩ ব্যাচের রীনা মিত্রের নাম।
৩১ জানুয়ারি তিনি অবসর নিয়েছেন। আর ১ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসে সিবিআইয়ের অধিকর্তা পদে পাঁচ জনের তালিকা তৈরি করেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটি। ২ ফেব্রুয়ারি ‘সিনিয়রিটি’ অনুযায়ী অধিকর্তা হন ১৯৮৩ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ঋষি শুক্ল। সিবিআই অধিকর্তার দৌড়ে যাঁর নাম প্রাথমিক ভাবে উঠে এসেছিল, ১৯৮৩ ব্যাচের সেই রীনা মিত্রের অভিযোগ, ‘‘সিনিয়রিটিই যদি দেখা হয়, তাহলে ৩১ জানুয়ারি বৈঠক হলে আমারই সিবিআই অধিকর্তা হওয়ার কথা।’’
শুধু তাই নয়, অবসরের পরেই আনন্দবাজারে দেওয়া বিশেষ নিবন্ধের এক অংশে তিনি লিখেছেন, ‘‘চূড়ান্ত বৈঠকে একদিনের দেরি এড়ানোই যেত (অ্যাভয়েডবল ডিলে)। এই একদিনের দেরির কারণে দৌড় থেকে আমাকে কার্যত বার করে দেওয়া হল।... ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, এটাই কি আমার পেশাগত জীবনের শেষ বাধা (গ্লাস সিলিং)?’’ প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি নিয়োগ কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে সিবিআই অধিকর্তা পদে ৭০ জনের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে খবর! চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বৈঠক পরে হবে বলে জানানো হয়। ওই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে।
তবে বৈঠকে ‘বিলম্ব’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ব্যাখ্যা, কার নাম চূড়ান্ত হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একা সরকারের হাতে নেই। সরকারের শুধু বৈঠক ডাকার এক্তিয়ার রয়েছে। তিন জনের কমিটিতে অন্তত দু’জনের সহমতে নাম চূড়ান্ত হয়ে থাকে। সময়ে বৈঠক হলেই যে কারও নাম চূড়ান্ত হত, এমন নিশ্চয়তা নেই। তিন সদস্যের মধ্যে দু’জন কারও বিরুদ্ধে মত দিলে, তাঁর নাম বাতিল হয়ে যায়।
আদতে বাঁকুড়ার মেয়ে রীনাদেবীর ছোট বেলা কেটেছে ঝরিয়া-রানিগঞ্জের কোলিয়ারি এলাকায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা আইপিএস হিসাবে ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। কাজ করেছেন মধ্যপ্রদেশ পুলিশ, রেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এমনকি, সিবিআইয়েও ছিলেন বেশ কয়েক বছর। আনন্দবাজারে দেওয়া বিশেষ নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘একজন মহিলা তাই আমি সিবিআইয়ের ডিরেক্টর পদের নির্বাচনে এগিয়ে ছিলাম, এমনটা ঠিক নয়। কোনও মহিলার ক্ষেত্রেই এমন ধারণা তৈরি করার প্রয়োজন নেই। আমি চেয়েছিলাম গুণ, যোগ্যতার বিচারেই আমার এই পদে নির্বাচন হোক। কারণ, আমার এই পদের জন্য সব যোগ্যতা ছিল। আমিই ছিলাম তালিকায় সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার। শুধুমাত্র এক জন মহিলা হিসাবে নয়, কিন্তু একজন মহিলা, যাঁর সব যোগ্যতা ছিল...’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘সরকারের সামনে একটা সুযোগ ছিল একজন সৎ, যোগ্য, এই পদের সমস্ত শর্তপূরণকারী অফিসার হিসাবে আমাকে নিয়োগ করার।’
রীনাদেবীর সতীর্থদের একাংশ জানাচ্ছেন, সিনিয়রিটির পাশাপাশি সিবিআইয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা, রেল মন্ত্রকে ভিজিল্যান্সে এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্য ভিজিল্যান্সে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। ফলে দুর্নীতি দমনে তাঁর অভিজ্ঞতা অনেকের চেয়েই বেশি। শুক্লের যে অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। রীনাদেবী লিখেছেন, ‘সিবিআইয়ের ডিরেক্টর হওয়াটাই হয়তো আমার কর্মজীবনের চূড়ান্ত ধাপ হতে পারত। যে সুযোগ আমি হারিয়েছি। আমার পরেও অনেকেরই এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। তাঁরা আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, ম্যানেজার, ব্যাঙ্কারের মতো বিভিন্ন পেশার হতে পারেন। তাঁদের জন্য বলব, লড়াই ছাড়বেন না। হয়তো আমি পারিনি। আপনারা ঠিক পারবেন।’
নিয়োগ কমিটির সদস্য খড়্গে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, বাছাই করে যে নামগুলি তাঁদের দেওয়া হয়েছে তাতে দিল্লির স্পেশাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট আইন মানা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট বিনীত নারায়ণ মামলার রায়ে বলেছিল, ওই পদে এমন এক আইপিএস অফিসারকে নিয়োগ করতে হবে, যাঁর ‘সিনিয়রটি’ ও ‘ইন্টিগ্রিটি’ রয়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। শেষ মুহূর্তে যে নামগুলি বাছাই করা হয়েছিল এবং যাকে শেষে নিয়োগ করা হয়, তিনি ওই শর্ত পূরণ করছেন না। বিশেষ করে দুর্নীতি দমনে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তো বটেই।