Herd Immunity

হু হু করে ছড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ, হার্ড ইমিউনিটি কি আদৌ বাস্তব না শুধুই কল্পনা?

ব্যাপক হারে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, হার্ড ইমিউনিটি কি আদৌ সম্ভব? না কি তা কেবলমাত্র গবেষণাপত্র আর আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ?

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ১২:২৪
Share:

হার্ড ইমিউনিটি কি তৈরি হবে? ফাইল চিত্র

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রায় সুনামির মতো সব হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা আশা করেছিলেন, হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠলে কোভিড সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু দাবানলের মতো কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে, মহারাষ্ট্রে প্রতি ৩ মিনিটে ১ জন কোভিড আক্রান্ত মারা যাচ্ছেন, ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, হার্ড ইমিউনিটি কি আদৌ সম্ভব? না কি তা কেবলমাত্র গবেষণাপত্র আর আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ?

Advertisement

কী এই হার্ড ইমিউনিটি

রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন, ভাইরাস সংক্রমণের পরে প্রত্যেকের শরীরেই একটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা পরবর্তী কালে এই একই সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ধরা যাক কোনও একটি অঞ্চলে ১ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে যদি ৭০০–৮০০ জনের সংক্রমণ হয়, তা হলে সেই অঞ্চলের বাকি মানুষদের সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে। কারণ, যাঁদের এক বার সংক্রমণ হয়েছে তাঁদের যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে নিজেরা নিরাপদ থাকবেন, তেমনই অন্যদের মধ্যেও অসুখটা তাঁরা আর ছড়াবেন না।

Advertisement

মুম্বাইয়ের ধরাভি বস্তিতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়নি কেন

সুবর্ণ জানালেন, কোভিড সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে মুম্বাইয়ের ধরাভি বস্তিতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির ব্যাপারে আশা করা হয়েছিল। ওই অঞ্চলে সমীক্ষা করে প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষের শরীরে কোভিড অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই অ্যান্টিবডি কার্যকরিতা হারিয়ে ফেলেছে। এক বার কোভিড সংক্রমণের পরেও দ্বিতীয় বার কোভিড সংক্রমণ আটকানো যাচ্ছে না। এনএবিএল-এর উপদেষ্টা প্যাথোলজির চিকিৎসক শঙ্কর সেনগুপ্ত জানালেন, একই ভাইরাস বার বার কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমিত হলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। কিন্তু অতিমারি সৃষ্টিকারী কোভিড ১৯ আরএনএ ভাইরাস নিজেকে এমন ভাবে বদলে ফেলছে যে, হার্ড ইমিউনিটি তৈরির পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই কারণেই এক জন মানুষ দ্বিতীয় বারও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন।

হার্ড ইমিউনিটির জন্য গণহারে টিকা দেওয়া দরকার

আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার একমাত্র উপায় টিকা দেওয়া। অন্তত তেমনটাই দাবি মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হলে কোভিড সংক্রমণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যাবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সুকুমার জানালেন, “কোভিডের টিকা দিয়েই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা যায়। তাই ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেকের জন্যই কোভিড টিকা বাধ্যতামূলক করা উচিত। প্রসঙ্গত কোভিডের থেকেও বেশি সংক্রামক হাম আটকাতে ৯৫ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়ায় হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। পোলিওর সংক্রমণ আটকানো গিয়েছে ৮০ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়ার পরে। সুতরাং কোভিডের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে টিকা নেওয়াই একমাত্র পথ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন