এনআরসি বলবৎ করা কি খুব জরুরি?

অসমে ইতিমধ্যেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ। বাংলায় এনআরসি চালুর জন্য হুঙ্কার দিচ্ছে বিজেপি। আনন্দবাজার চায় সুস্থ বিতর্ক।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৫
Share:

পক্ষে

Advertisement

সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না লেখা সহজে... সাম্প্রতিক সময়ে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে একটা কালিদাস-সুলভ আচরণ লক্ষ্য করে বিখ্যাত এই লাইন দু’টি মনে পড়ে গেল। বিষয়টি কিন্তু অত্যন্ত সরল ও ন্যায়সঙ্গত। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে কে তার নাগরিক অথবা কে বহিরাগত তা নির্ণয় করার অধিকার ভারতের আছে। সংবিধান রচনার সময়ে রাষ্ট্র তার ‘নাগরিক’ সংজ্ঞা স্পষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ করলেও নানা দায়বদ্ধতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই ১৯৫৫ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বারংবার সংজ্ঞাটির সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত অত্যাচারের কারণে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তৃতীয়াংশ পাশ্ববর্তী অসম ও পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ওই ছিন্নমূল মানুষদের একাংশকে ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ়ের দুর্গম অঞ্চলে জবরদস্তি পাঠিয়ে দিতে শুরু করে। অবশিষ্টাংশ যারা এ রাজ্যে ধুবুলিয়া, কুপার্স, খোশবাস মহল্লা বা রেললাইনের পাশে মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন, তাঁদের পরিচয় হল ‘উদ্বাস্তু’।

Advertisement

৬০-এর দশক থেকেই কমিউনিস্ট পার্টি এই ছিন্নমূল মানুষগুলিকে ভূমি সংস্কারের স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের গণভিত্তি মজবুত করতে থাকে। অথচ ক্ষমতায় আসার পরে তারাই সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি থেকে উদ্বাস্তুদের উৎখাত করে, অনেককে নির্মম ভাবে হত্যা করে। তবু দুর্দান্ত গণসংযোগ ও রাষ্ট্রসুলভ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে মরিচঝাঁপি এ রাজ্যের উদ্বাস্তু সমাজজীবনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট ২৪ পরগনা ও নদিয়ার উদ্বাস্তু শ্রেণিকে শুধু মাত্র ব্রিগেড ভরানোর যন্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করে এসেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত ধ্বংসলীলা, জাতিগত দাঙ্গা, অব-ঔপনিবেশিকীকরণ প্রভৃতি কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জও তার জেনিভা ও উরুগুয়ের বৈঠকে ‘উদ্বাস্তু’ শব্দটির সংজ্ঞা তৈরি করতে বাধ্য হয় এবং ওই বিশেষ মানুষগুলিকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কেন্দ্রের কংগ্রেস বা রাজ্যের বামফ্রন্ট-তৃণমূল কেউ সেই প্রস্তাবগুলি কার্যকর করেনি। তারা বরং ‘সাচার কমিটি’র প্রস্তাবগুলি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছিলেন। এ দিকে উদ্বাস্তু মানুষগুলির রেশন কার্ড থেকে বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট থেকে চাকরি, সব কিছুই এক অশুভ চক্রের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকল যে চক্রে পার্টির নেতা থেকে দালাল, পুলিশ-আমলার উপস্থিতি আনুগত্য প্রমাণের একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

বিজেপি তার জন্মলগ্ন থেকেই এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং ওই নির্যাতনের কারণে এ রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দানের পক্ষে তাদের চার দশকের ধারাবাহিক আন্দোলন আজ রাজ্যের চল্লিশ শতাংশের বেশি মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে। প্রাক্‌-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেপি ২০১৬ সালেই সংসদে এই উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে বাম-তৃণমূল জোট তার প্রবল বিরোধিতা করে। বাম-তৃণমূল দলের চিন্তকেরা এখন এত দিনের ‘উদ্বাস্তু ভোটব্যাঙ্ক’ হাতছাড়া করার ঝুঁকি নিলেন কারণ তাঁদের নজরে এসে পড়েছে আরও বড় ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ভোটব্যাঙ্ক’।

’৮০-র দশক থেকেই উন্নয়নশীল ভারতে জীবন-জীবিকার তাগিদে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে শুরু করে, যা ’৯০-এর দশকের মাঝামাঝি অর্থাৎ উদার অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পরে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলির অজানা ছিল না। ১৯৯৭ সাল থেকে সিপিআইয়ের ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তখনও কংগ্রেসে), কংগ্রেসের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল প্রমুখ সকলেই সংসদে এই অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় খারিজি মাদ্রাসাগুলির কাজকর্ম নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএমের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অসন্তোষও প্রকাশ পেয়েছিল।

২০১৯-এ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পরে বিজেপি যে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দানের পরে এনআরসি দ্বারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করবে— এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই অ-বিজেপি দলগুলি কালিদাস-সুলভ আচরণ শুরু করে দিয়েছে। যে কোনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা বিপজ্জনক প্রতিপন্ন হয়েছে। এই রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনবিন্যাসের পরিবর্তন দ্রুতগতিতে ঘটে চলেছে। নদিয়ার দত্তফুলিয়া থেকে করিমপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সীমান্তে যে ভাবে কুশলতার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা উপেক্ষা করা যায় না। শুধু মাত্র ধানতলা থানার অধীনেই গত এক মাসে দু’টি ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা ঘটতে চলেছিল যার নেপথ্য নায়ক ছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা। বিষয়টি বিচারাধীন বলে কারও নাম প্রকাশ করলাম না। তবে মনে রাখা ভাল যে এ দেশের বৈধ নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নিতে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ‘ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ তৈরির কারখানা গড়ে তোলার নায়ক শাকিল আহমেদ কিন্তু নদিয়ার করিমপুর সীমান্ত দিয়েই এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল ।

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ কার্যকরী সদস্য, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ

বিপক্ষে

দু’দেশ আলাদা করার স্তম্ভচিহ্ন পুকুরে ডুবে আছে। আপাতদৃষ্টিতে সীমানা নেই। মাটির বাড়ি থেকে সাপ বেরিয়ে হেলতে দুলতে নিশ্চিন্তে চলে যাচ্ছে, এ বাংলা থেকে ও বাংলায়। তার কোনও সীমানা নেই। সীমানা আছে মানুষের।

আনন্দবাজার পত্রিকায় স্বাধীনতার বছরে ২১ মার্চ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘‘বাংলা ভাগ-এর কথা শুনলেই যেন আমরা হঠাৎ করে মূর্ছা না যাই।” তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন বাংলা ভাগের ‘সুফল’। তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী, বাংলা ভাগ হলে পশ্চিমবাংলায় হিন্দুর সংখ্যা হবে সত্তর ভাগ, অর্থাৎ এতে বাঙালি হিন্দু বাঁচবে। চোখের জলে, দীর্ঘশ্বাসে, ব্যক্ত-অব্যক্ত যন্ত্রণায় দেশ ভাগ, বাংলা ভাগ হল। হিন্দু মহাসভার এক নেতাকে বাঙালি সেই যে ভুলল, আর মনে রাখেনি। ২০১৪ সাল থেকে সেই শ্যামাপ্রসাদকে বিজেপি বাঙালির ‘আইকন’ তৈরির চেষ্টা করছে নাগপুর থেকে, যেখানে বিষ তৈরির কারখানা।

উদ্বাস্তু জীবন সংগ্রাম বামেদেরই ‘সাথী’ হিসাবে পেয়েছিল। কংগ্রেস সরকার উদ্বাস্তু উচ্ছেদের ‘Eviction Bill’ আনলে বামেদের ইউসিআরসি তেড়ে-ফুঁড়ে সবাইকে এক করে বিধানসভায় হানা দেয়। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হবে না— এই সংক্রান্ত বিল আদায় করে। আত্মীয় কোথায় আছে বুঝে কুপার্স ক্যাম্প, ধুবুলিয়া ক্যাম্প ইত্যাদিতে উদ্‌ভ্রান্ত উদ্বাস্তুদের পাঠানোতেও সাহায্য করেছিল বামেরা। ধর্মের তথাকথিত ধ্বজাধারীরা তখন ধারে-কাছে কোথাও নেই। ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ১৯৩টি উদ্বাস্তু পরিবার বাড়ির জমি পেয়েছে বাম সরকারের আমলেই। নিঃশর্ত দলিল। পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের লক্ষ্য আর উদ্বাস্তুদের মরিচঝাঁপি নিয়ে রটনাও একই রকম। জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পরে মালকানগিরিতে শোকসভা হয়েছে। যাঁরা মরিচঝাঁপি থেকে সেখানে ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা সভায় বলেছেন মরিচঝাঁপিতে যাওয়া ভুল হয়েছিল। তাঁরা জানতেন না, মরিচঝাঁপি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যা ধ্বংস হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, উদ্বাস্তুদের অমিত শাহ নামকরণ করেছেন ‘উইপোকা’। হিটলার বলেছিলেন ‘আরশোলা’।

এনআরসি-তে অসমের ১৯ লক্ষ লোকের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বিপদে পড়েছেন মানুষগুলি। তবে তাঁদের চেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে বিজেপি। বিধানসভা আর লোকসভা ভোটের আগে তারা বলেছিল, হিন্দুদের ভয় নেই। বাঙালি-অসমীয় দ্বন্দ্ব যা-ই থাক না কেন, এই আনন্দে বাক্স ভরে অনেকে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন যে ১৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে তার মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ হিন্দু। হিন্দুরা এখন খেপে লাল। এ রাজ্যে যাঁরা হিন্দু পরিচয়ে বিজেপির স্তোত্রে বিশ্বাস করছেন, তাঁরা এনআরসি-কে অসমের আরশিতে দেখুন। হিন্দু বলেই রক্ষা পাবেন না।

এ রাজ্যে যাঁরা ভূমিপুত্র, চালু ভাষায় ‘ঘটি’, তাঁদের অনেকে মনে করেন এনআরসি-তে বাঙালদেরই সমস্যা, তাঁদের নয়। অসমে সে রকম ভূমিপুত্রের সংখ্যা দুই লক্ষ, যাঁদের নাম বাদ পড়েছে। ফলে এ রাজ্যে ‘ঘটি’রাও নিরাপদ নন। দার্জিলিঙের সাংসদকে পাহাড়ের মানুষ তাড়া করেছে। কারণ অসমের চূড়ান্ত তালিকা থেকে এক লক্ষ গোর্খার নামও বাদ পড়েছে।
বিজেপি যার জোরে হিন্দুদের রক্ষা করার কথা বলেছিল, সেই বিলের পোশাকি নাম ‘দ্য সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০১৬’। লোকসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ৩ জুন ২০১৯-এ তা পরিত্যক্ত। এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে তা নতুন করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে তারা। এতে ছিল ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি এ দেশে আগত হিন্দুদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে না। এর মানে হিন্দুর ‘নাগরিকত্ব’ পাওয়া হল না। আসলে সে হল ‘শরণার্থী’। সরকারের দিকে তাকিয়ে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে বসে থাকতে হবে তাকে, ‘সকলি তোমার ইচ্ছা’ বলে। ভোটার লিস্ট, পাসপোর্ট, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, চাকরি, উচ্চশিক্ষা, জমি-বাড়ি কিছুই বৈধ হবে না। জনপদে অধিকারহীন দ্বীপবাসী হয়ে থাকতে হবে। এমনকি আবেদন করে নাগরিকত্ব পেতে গেলেও ধর্মীয় অত্যাচার বা সেই আশঙ্কায় আগের দেশ ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে— এমন শংসাপত্র সেই দেশ থেকে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাং সোজা কথায় বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে শংসাপত্র আনতে হবে যে সেখানকার মুসলমানদের অত্যাচারে উদ্বাস্তুকে এ দেশে আসতে হয়েছে। তা পাওয়া যাবে তো?

বিজেপির মোক্ষম চাল ছিল, হিন্দুদের কাছে বলা যে মুসলমানেরা নাগরিক হবে না। এই বলে হিন্দুর ভোট নেওয়া। কিন্তু সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় লিঙ্গ-ধর্ম-জাতভেদে জনগণকে ভাগ করা যায় না। অর্থাৎ তা সংবিধান বিরোধী। এখন কার্যকরী ২০০৩ সালে বিজেপি সরকারেরই (তখন অবশ্য বাজপেয়ী জমানা) আনা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’। তার ২ (১) বি-র ধারা অনুযায়ী, পাসপোর্ট বা ওই ধরনের বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া যাঁরা ভারতে ঢুকছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই অনুপ্রবেশকারী। এবং এর কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তার মানে ১০৫০-এর আগে ভারতে থাকার কাগজ দেখাতে হবে। আগে ছিল শুধু বাবা। এখন বাবা-মা দু’জনেই নাগরিক না হলে সন্তান নাগরিক হবে না। এই আইনেই বিজেপি যুক্ত করে ১৪ (এ) ধারা। তাতেই সারা দেশে এনআরসি বাধ্যতামূলক। এই যদি হয়, তা হলে পশ্চিমবাংলায় ৯৯ শতাংশ উদ্বাস্তুই অনুপ্রবেশকারী তকমা পাবেন। এমনকি অনুদ্বাস্তুরাও বিপদে পড়বেন।

২০০৫ সালের ৪ আগস্ট সে দিনের সাংসদ, আজকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কাগজ ছুড়ে মেরেছিলেন লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের মুখে। সে দিন আমি সংসদে। অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে, তাদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। অর্থাৎ বিজেপি আজ যা বলছে সে দিন তিনিই তা বলেছিলেন। অসম থেকে পাঠানো প্রায় এক লক্ষ মানুষের ‘লিগ্যাল ভেরিফিকেশন’ না পাঠানোয় সেই মানুষগুলি আজ ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত। তাঁর উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ উদ্বাস্তু মানুষের স্বার্থে নয়। এ রাজ্যে উদ্বাস্তুদের বেশির ভাগ তফসিলি—নমঃশূদ্র, রাজবংশী ইত্যাদি যে নামেই চিনুন না কেন। বিজেপি মনুস্মৃতিকে সংবিধান বানাতে চাইছে, যার ছত্রে-ছত্রে দলিত-তফসিলিদের প্রতি ঘৃণা।
নদিয়ার মানুষ ১৯৪৭ সালের ১৫, ১৬, ১৭ অগস্ট— তিন দিন অরন্ধনে নিষ্প্রদীপ ছিলেন। রুদ্ধশ্বাসে। ‘সার্জিক্যাল ক্রাফটেড’ মানচিত্রে জেলার একটা বড় অংশ তখন পূর্ব পাকিস্তানে বলে সকলের ধারণা। চোখের পলকে বিদেশি হতে হলে কী হয়, নদিয়া জানে। রাজ্যের সঙ্গে নদিয়াবাসীর মনে প্রশ্ন একটাই— কারা বসন্তের আশা জাগিয়ে হিমশীতল হতাশা তৈরি করে?

অলোকেশ দাস, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সিপিএম তথা প্রাক্তন সাংসদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন