অরুণাচলে কি ‘ক্রীতদাস’ প্রথা, তুমুল শোরগোল

অসমের বিশ্বনাথ জেলার বিহালি থেকে চা-শ্রমিক পরিবারের সাত বছরের মেয়ে পূজাকে বিউটি পার্লারে কাজে লাগানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাবা-মার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিল দালালরা।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত 

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

উত্তর-পূর্বে শ্রমিক কেনাবেচার বাজার! অরুণাচল থেকে উদ্ধার হওয়া এক তরুণীর অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আসার পরেই তোলপাড় শুরু হয়েছে অরুণাচল-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে।

Advertisement

অসমের বিশ্বনাথ জেলার বিহালি থেকে চা-শ্রমিক পরিবারের সাত বছরের মেয়ে পূজাকে বিউটি পার্লারে কাজে লাগানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাবা-মার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিল দালালরা। প্রথমে তাকে দাপোরিজোয়ের এক পরিবারে বিক্রি করা হয়। কিছু দিন সেখানে পরিচারিকার কাজ করে পূজা। পরে ওই পরিবার তাকে আপার সুবনসিরি জেলায়, চিন সীমান্ত ঘেঁষা টাকসিঙে অন্য এক পরিবারকে বিক্রি করে দেয়। দুর্গম ওই এলাকা থেকে পালিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। ঘরের কাজের পাশাপাশি ঝুম চাষ ও সেনাবাহিনীর রসদ পৌঁছনোর কাজ করতে হত।

সে জানায়, ওই এলাকায় সেনাকে রেশন পৌঁছে দেওয়া, রাস্তা সারানোর কাজ করা, সেনা-বাঙ্কার তৈরি করার কাজে এমন বন্ধুয়া শ্রমিকদেরই লাগায় স্থানীয় ঠিকাদাররা। তাই কিশোর ও যুবকদের দর বেশি, ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিশোরী হলে ৫-৬ হাজার। চেহারা বুঝে তরুণীদের দর ৫০ হাজার টাকাও ছাড়ায়। যৌন নির্যাতনও চলে তাদের উপরে। ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীরা কোনও হাতখরচা পায় না। শুধু খেতে পায়। কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত ২-৩ বার বিক্রি হয় তারা।

Advertisement

পূজা জানায়, ৯ বছর ধরে টাকসিঙে কাজ করেছে সে। অসম থেকে বিক্রি হওয়া অন্য তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সেনা শিবিরে রেশন বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ধেমাজির ‘ক্রীতদাস’ রাজীব গগৈয়ের সঙ্গে পূজার আলাপ। পূজা তাকে গোপনে বাড়ির ঠিকানা জানায়। সম্প্রতি রাজীব সত্যিই পালিয়ে আসে। বিশ্বনাথে এসে পূজার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশের চেষ্টায় ২ জুলাই পূজাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া পূজা জানায়, ওই এলাকায় অসমের পঞ্চাশেরও বেশি ছেলেমেয়ে এখন কাজ করছে। চা-শ্রমিক সংগঠনের দাবি, লখিমপুর, ধেমাজি, শোণিতপুর, বিশ্বনাথ জেলার বহু ছেলেমেয়ে অরুণাচলে বহু ধনী পরিবারে ‘ক্রীতদাস’ হয়ে আছে জেনেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না।

পুলিশের বক্তব্য, বেশির ভাগ পরিবারই কোনও এফআইআর করে না। অনেকে স্বেচ্ছায় টাকা নিয়েও ছেলেমেয়েদের অরুণাচলে পাঠায়। অসম শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনীতা চাংকাকতি বলেন, ‘‘যে হেতু দুই রাজ্যের বিষয়, সে কারণে জাতীয় কমিশনকে জানিয়েছি। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন