ছয় বিদেশি উপগ্রহকে সঙ্গী করে লক্ষ্মীলাভ ইসরোর

রথ দেখা তো হলই, সঙ্গে চলল দেদার কলা বেচা! আরও সহজ করে বললে, বেড়াতে যাওয়ার পথে গাড়ির ফাঁকা সিটে কয়েক জন যাত্রী তুলে এ যাত্রায় লক্ষ্মীলাভ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীহরিকোটা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

রথ দেখা তো হলই, সঙ্গে চলল দেদার কলা বেচা! আরও সহজ করে বললে, বেড়াতে যাওয়ার পথে গাড়ির ফাঁকা সিটে কয়েক জন যাত্রী তুলে এ যাত্রায় লক্ষ্মীলাভ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো)।

Advertisement

সোমবার ভারতের নিজস্ব উপগ্রহ অ্যাস্ট্রোস্যাটের সফল উৎক্ষেপণের পাশাপাশি আরও ছ’টি বিদেশি উপগ্রহকে মহাকাশে বয়ে নিয়ে গিয়েছে ইসরোর পিএসএলভি সি-৩০ রকেট। যা থেকে বিদেশি অর্থও ঘরে এসেছে। অর্থাৎ নিজের কাজের পাশাপাশি মহাকাশ অভিযানের বাণিজ্যিকীকরণ করে একই যাত্রায় দু’টো ফল ফলালেন দেশের মহাকাশ গবেষণা দফতরের কর্তারা।

এ দিন অ্যাস্ট্রোস্যাটের পাশাপাশি আমেরিকার একটি সংস্থার চারটি উপগ্রহ এবং কানাডা ও ইন্দোনেশিয়ার একটি করে উপগ্রহ মহাকাশে পৌঁছে দিয়েছে ইসরো। উপগ্রহগুলি সব ক’টি ছোট মাপের। সব মিলিয়ে ওজন ১১৮ কিলোগ্রাম। প্রসঙ্গত, এই প্রথম কোনও মার্কিন সংস্থা তাদের উপগ্রহ ইসরোর মাধ্যমে মহাকাশে পাঠাল।

Advertisement

ইসরো সূত্রে খবর, বিদেশি এই উপগ্রহগুলির রিমোট সেন্সিং, জিপিএস পরিষেবা এবং অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম পরিষেবা সমুদ্রে নজরদারির কাজে লাগানো হবে। ইসরোর দায়িত্ব ছিল, বিদেশি এই উপগ্রহগুলিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়া। তা সফল ভাবেই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরো কর্তারা।

মহাকাশ অভিযানের বাণিজ্যিকীকরণ অবশ্য বিরল ঘটনা নয়। এর আগে ৪৫টি ছোট ও মাঝারি মাপের বিদেশি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছে ইসরো। ২০০৮ সালে এক সঙ্গে ৯টি বিদেশি উপগ্রহ পাঠানোর রেকর্ডও রয়েছে তাদের। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রের অধিকর্তা পি কুন্নিকৃষ্ণন বললেন, ‘‘আজ আরও ৬টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়ে আমরা হাফ সেঞ্চুরি করলাম। ইসরোর এই সাফল্য দেশকেও গর্বিত করেছে।’’

উপগ্রহ উৎক্ষেপণে ইসরোকে কেন বেছে নিচ্ছে উন্নত দেশগুলি?

ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মতে, উৎক্ষেপণ প্রযুক্তিতে ভারত বিশ্বের প্রথম সারিতে পড়ে। তার উপর এ দেশে উৎক্ষেপণের খরচ অনেক কম। তাই উৎক্ষেপণের বরাত দেওয়ায় অনেক দেশেরই প্রথম পছন্দ ভারত। এ বারের বরাত পাওয়ার পিছনে অবশ্য অন্য একটি কারণও রয়েছে বলে মনে করছে ইসরোর কয়েকটি সূত্র। মূলত সমুদ্রে নজরদারি ও জিপিএস পরিষেবা দেওয়ার এই উপগ্রহগুলি আকারে ছোট ও ওজন কম। ফলে শুধু এই উপগ্রহগুলির জন্য গোটা একটা রকেট পাঠাতে হলে খরচের বোঝা বাড়ত। ফলে, সেটাও ইসরোর বরাত পাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

বিষয়টি আরও সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন ইসরোর এক বিজ্ঞানী। তিনি বললেন, ধরা যাক কোনও ব্যবসায়ীর ১০০ কিলোগ্রাম মালবহনকারী একটা ট্রাক রয়েছে। কিন্তু তার মালপত্রের ওজন ৮০ কিলো। ফলে বাকি ২০ কিলো ফাঁকা না রেখে তিনি অন্য কোনও ব্যবসায়ীর জিনিস নিয়ে গেলেন। তাতে আয়ও বাড়ল। পাশাপাশি দ্বিতীয় ব্যবসায়ীও কম খরচে মাল গন্তব্যে পাঠাতে পারলেন। ঠিক এই পথেই হেঁটেছে ইসরো। গোটা ব্যাপারটাকে এক কথায় ব্যাখ্যা করে ওই বিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘সরস্বতীর সাধনায় লক্ষ্মীলাভ আর কি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন