Congress

সঙ্ঘের সংগঠনের প্রশংসা, ‘বিদ্রোহের মুখ’ দিগ্বিজয়ও

এ বার বিদ্রোহের মুখ দলের প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। যিনি একসময় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আসার জন্য সব থেকে বেশি দাবি তুলতেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৭
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে ফের দলের মধ্যে ‘বিদ্রোহ’ দেখা দিল।

এ বার বিদ্রোহের মুখ দলের প্রবীণ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। যিনি একসময় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আসার জন্য সব থেকে বেশি দাবি তুলতেন। সেই দিগ্বিজয় আজ কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠকের আগে সমাজমাধ্যমে নরেন্দ্র মোদী-লালকৃষ্ণ আডবাণীর পুরনো ছবি তুলে ধরে বিজেপি, আরএসএসের সাংগঠনিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এর পরে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে রাহুলগান্ধীর সামনে দিগ্বিজয় দাবি তুলেছেন, দলের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। রাজ্যে রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করা হচ্ছে না।

দিগ্বিজয়ের তুলে ধরা পুরনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আডবাণীর সামনে পায়ের কাছে মাটিতে বসে রয়েছেন মোদী। দিগ্বিজয় লিখেছেন, ‘‘এই ছবি খুবই প্রভাবশালী। কী ভাবে আরএসএসের নিচুতলার স্বয়ংসেবক ও জনসঙ্ঘ-বিজেপির কর্মকর্তা নেতাদের পায়ের কাছে মেঝেতে বসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন। এটাই সংগঠনের শক্তি।’’

লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অপেক্ষাকৃত ভাল ফলের পরেও যে ভাবে হরিয়ানা, বিহার, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের খারাপ ফল হয়েছে, তার জন্য কংগ্রেসের মধ্যেই সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে সিদ্দারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমারের বিবাদ সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। কংগ্রেসের বৈঠকের আগে সদর দফতরে কর্নাটকের একগুচ্ছ নেতা দলিত নেতা জি পরমেশ্বরকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি নিয়ে স্লোগান দিয়েছেন। তার পরে সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে দিগ্বিজয়ের অভিযোগ দলের মধ্যে ক্ষোভ নতুন করে প্রকাশ্যে এনে ফেলেছে।

দিগ্বিজয়ের এই অভিযোগ কার্যত রাহুল ও তাঁর আস্থাভাজন সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপালকেই ‘প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ’ বলে কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে হলেও দলের মধ্যে রাহুলই ‘ক্ষমতার কেন্দ্র’। ঠিক এক সপ্তাহ আগে দিগ্বিজয় একই ভাবে সমাজমাধ্যমে রাহুলের কাছে কংগ্রেসের সংগঠনের দিকে নজর দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। ‘এক্স’ হ্যান্ডলে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘রাহুল গান্ধীজি, আপনি আর্থ-সামাজিক বিষয়ে একেবারে সঠিক অবস্থান নেন। পুরো নম্বর দিতে হবে। কিন্তু এ বার দয়া করে কংগ্রেসের দিকে নজর দিন। নির্বাচন কমিশনের মতো কংগ্রেসেরও সংস্কার প্রয়োজন। আপনি সংগঠন সৃজন শুরু করেছিলেন। কিন্তু আমাদের আরও বাস্তববাদী, বিকেন্দ্রীভূত ভাবে কাজ করতে হবে। আমি নিশ্চিত, আপনি তা করবেন। কারণ, আমি জানি, আপনি পারবেন। একমাত্র সমস্যা হল, আপনাকে রাজি করানো সহজ নয়।’’

এখন কংগ্রেসের সাংগঠনিক বিষয়ে সব ক্ষমতা বেণুগোপালের হাতে। ‘সংগঠন সৃজন’ নামে কংগ্রেস নতুন করে যে সংগঠন চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে, বেণুগোপালই তার দায়িত্বে। দিগ্বিজয় বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন, বহু দিন আগে কংগ্রেসের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত হলেও তা রূপায়ণ হয়নি কেন?

বৈঠকের পরে দিগ্বিজয় যুক্তি দেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি, আরএসএসের মতাদর্শের ঘোর বিরোধী। বিজেপি-আরএসএসের সংগঠনের প্রশংসা করেছেন। কংগ্রেসের বুথ স্তরে সংগঠন প্রয়োজন। যার মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিজেপি-আরএসএসের প্রচারের মোকাবিলা করা যায়। দিগ্বিজয় বলেন, ‘‘অতীতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা সংগঠন সৃজন নিয়ে যে সব প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমি সে কথাই বলেছি।’’ এর ফলে সংগঠনে প্রিয়ঙ্কার নতুন ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি এ দিন বৈঠকে ছিলেন না। সূত্রের খবর, তিনি বিদেশ সফরে। এত দিন একাধিক বৈঠকে গরহাজির আর এক ‘বিক্ষুব্ধ’ শশী তারুর এ দিন উপস্থিত ছিলেন।

বিজেপি-আরএসএসের প্রশংসা করে দিগ্বিজয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক হাল নিয়ে পরমার্শ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কংগ্রেসের এক নেতা তাকে ‘অবসরকালে বিপরীত বুদ্ধি’ বলে কটাক্ষ করেন। কারণ, দিগ্বিজয়ের রাজ্যসভার মেয়াদ চার মাসেরমধ্যে শেষ হবে। একাংশ মনে করছেন, দিগ্বিজয় তাঁর ছেলে জয়বর্ধনের বদলে জিতু পাটোয়ারিকে মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ সভাপতি করায় ক্ষুব্ধ। কিন্তু দলের বড় অংশের নেতাদের মতে, দিগ্বিজয় কিছুই ভুল বলেননি।কারণ, কার্যকরী কমিটির বৈঠকের শুরুতে খড়্গে নিজেই বলেছিলেন, সংগঠন সৃজন অভিযানে ৫০০জেলায় সভাপতি নিয়োগ হয়েছে। আগামী চার মাসে বাকি সব জেলাতেও জেলা সভাপতি নিয়োগ করা হবে। কিন্তু শুধু নিয়োগ করলেই হবে না। রাজ্য, জেলা, ব্লক থেকে বুথ স্তরে সক্রিয়, দায়বদ্ধ ও লড়াকু সংগঠন তৈরি করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন