মাসুদ আজহারের ভাই আব্দুল রউফ আজহার নিহত বলে দাবি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুর অভিযানে নিহত ১৯৯৯ সালে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণের ঘটনায় যুক্ত অন্যতম কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী আব্দুল রউফ আজ়হার। তেমনই দাবি করছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। রউফ কুখ্যাত জইশ-জঙ্গি মাসুদ আজ়হারের ভাইও।
১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আব্দুল-সহ পাঁচ জঙ্গি আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ করেছিল। মাসুদ আজ়হার আলভি-সহ তিন কুখ্যাত জঙ্গিনেতার মুক্তির দাবিতেই বিমানটি অপহরণ করা হয়েছিল। ওই বিমানে মোট ১৭৯ জন যাত্রী এবং ১১ জন বিমানকর্মী ছিলেন। অমৃতসর, লাহৌর এবং দুবাই হয়ে অবশেষে বিমানটি আফগানিস্তানের কন্দহরে থামানো হয়। জঙ্গিরা রুপিন কাটিয়াল নামে এক যাত্রীকে নির্মম ভাবে হত্যাও করে। বাকি যাত্রীদের প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে মাসুদ-সহ তিন জঙ্গিনেতাকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত আব্দুলের মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি বিভিন্ন সূত্রে।
অপারেশন সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে মোট ন’টি জঙ্গিশিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সেগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে থাকা বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের মূল ঘাঁটি এবং মুরিদকে-তে লশকর-এ-ত্যায়বার মূল ঘাঁটি। জইশের মূল ঘাঁটিতে হামলায় প্রাণ হারিয়েছে সেই জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান মাসুদের পরিবারের ১০ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে তার ভাই, বোন ও ভাইপো। এ বার তার ভাই রউফের মৃত্যুর খবরও মিলল। ভারতের হামলায় সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৭০ জন জঙ্গির প্রাণহানি ঘটেছে বলে দাবি বিভিন্ন সূত্রে। যদিও ভারত সরকারের তরফে এই ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।
২০০১ সালে সংসদ হামলা, ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাস, ২০১৬-এ পঠানকোট এবং ২০১৯-এ পুলওয়ামা— ভারতে একাধিক বড় মাপের জঙ্গি হামলার নেপথ্যে মাসুদের হাত রয়েছে। ১৯৯৪ সালে মাসুদকে গ্রেফতার করেও ১৯৯৯ সালে কন্দহর বিমান অপহরণ কাণ্ডের পরে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভারত। পাকিস্তানে মাসুদকে বহু বার প্রকাশ্যে দেখা গেলেও ইসলামাবাদ বার বার দাবি করে এসেছে যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তালিকাভুক্ত এই জঙ্গিকে তারা আশ্রয় দেয়নি। সেই মাসুদের ১০ নিকটাত্মীয় ও চার সহযোগী নিহত হওয়ার পরেও পাকিস্তান বিষয়টি নিয়ে চুপ। তবে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মাসুদ নিজেই বিবৃতি জারি করে পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
মাসুদ বিবৃতিতে লিখেছেন, “বাহাওয়ালপুরে মার্কাজ় সুভান আল্লায় জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হানায় আমার দিদি, জামাইবাবু, ভাগ্নে, ভাগ্নে-বৌ, তাদের তিন সন্তান, ভাগ্নি, আমার এক তুতো ভাই ও তার মা এবং আমার চার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আল্লার প্রিয় হয়ে গিয়েছেন।” মাসুদ বলেছে, “আমার কোনও দুঃখও নেই, অনুশোচনাও নেই। তবে আমিও ওদের সঙ্গে আল্লার কাছে পৌঁছোতে পারলে সুখী হতাম।”