দেশে কালো টাকা উদ্ধারে নামতে আয়কর কর্তাদের নির্দেশ জেটলির

সাত সাগরের পার থেকে কালো টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলবে। কিন্তু দেশের মাটিতেও লুকিয়ে রাখা কালো টাকা খুঁড়ে বার করতে হবে। তেমনটাই চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি। আয়কর দফতরকে জেটলির নির্দেশ, সমস্ত শীর্ষকর্তা যেন কালো টাকা উদ্ধারকেই পাখির চোখ করেন। কারণ বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকার মতো, দেশে থাকা কালো টাকার পরিমাণও কম নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

সভার উদ্বোধনে জেটলি। ছবি: পিটিআই

সাত সাগরের পার থেকে কালো টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলবে। কিন্তু দেশের মাটিতেও লুকিয়ে রাখা কালো টাকা খুঁড়ে বার করতে হবে। তেমনটাই চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি। আয়কর দফতরকে জেটলির নির্দেশ, সমস্ত শীর্ষকর্তা যেন কালো টাকা উদ্ধারকেই পাখির চোখ করেন। কারণ বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকার মতো, দেশে থাকা কালো টাকার পরিমাণও কম নয়।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রচার শুরুর আগে থেকেই কালো টাকা উদ্ধারে জেহাদ ঘোষণা করে বিজেপি। সরকার গঠনের পরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সুইৎজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন। সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারে সাহায্য চান তিনি। বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধারে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম বি শাহের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-ও তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আজ সারা দেশের আয়কর দফতরের পদস্থ কর্তাদের সভায় জেটলি কালো টাকা উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্র বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশে কালো টাকা উদ্ধারে আয়কর অফিসারদের একই রকম চেষ্টা করতে হবে। এর পরিমাণটাও যথেষ্ট বড়।”

আয়কর কর্তারা মনে করছেন, নতুন সরকার তাঁদের শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এক দিকে কালো টাকা উদ্ধারের নির্দেশ, অন্য দিকে বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যপূরণে কর আদায় বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছেন জেটলি। চলতি বছরে প্রত্যক্ষ কর বাবদ ৭,৩৬,২২১ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নিয়েছেন জেটলি। আজ আয়কর কর্তাদের সম্মেলনে তিনি নিজেই বলেন, “অফিসারদের কাজটা খুব কঠিন। তাঁদের কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হয়, অন্য দিকে আয়করদাতাদের কর মেটানোর সুবন্দোবস্ত করতে হয়।”

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, আয়কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ না-হলে আইনি জটে আটকে থাকা কর সংক্রান্ত মামলাগুলির নিষ্পত্তি করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সরকারি হিসেবে মামলা-মোকদ্দমায় প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকার কর আদায় আটকে। এ দিন রাজস্ব সচিব শক্তিকান্ত দাসও আয়কর কর্তাদের আইনি জটিলতা কাটিয়ে মামলা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেন।

কালো টাকা উদ্ধার থেকে শুরু করে আইনি জটিলতায় আটকে থাকা কর আদায়-- কেন এ ভাবে আয় বাড়ানোর পন্থা খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি?

অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা, বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি বা রাজকোষ ঘাটতিকে জাতীয় আয়ের ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছেন জেটলি, যা যথেষ্ট কঠিন। কারণ বাজেটে ধরে নেওয়া হয়েছে, কর আদায় ২০% হারে বাড়বে। গত অর্থবর্ষে কর আদায় থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির হার ছিল এর অর্ধেক। আর্থিক বৃদ্ধির হার খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থনীতির শ্লথগতির ফলে স্বাভাবিক নিয়মে কর আদায় বাড়ারও আশা নেই। ফলে আয়কর কর্তাদেরই কোমর বেঁধে মাঠে নামতে হবে। কিন্তু আয় বা ব্যয়ের হিসেবে একটু গরমিল হলেই বাজেটের যাবতীয় হিসেব-নিকেশ উল্টে যাবে। আর সেই কারণেই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না অর্থমন্ত্রী। কালো টাকা উদ্ধারেরও নির্দেশ দিচ্ছেন।

প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের প্রধান আর কে তিওয়ারি অবশ্য বলেছেন, লক্ষ্য পূরণে তাঁরা সব রকম চেষ্টা করবেন। গত অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য পরোক্ষ কর বাবদ আয় নিয়ে চিন্তা থাকছে। কারণ গত অর্থবর্ষে এই বাবদ আয় মাত্র ৪.৭% বেড়েছিল। এ বার তা ২৭% বৃদ্ধি পাবে ধরে নিয়ে বাজেটের অঙ্ক কষেছেন জেটলি। আয়কর দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ বার তাই শুল্ক দফতরের কর্তাদের সঙ্গেও অর্থমন্ত্রী বৈঠক করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন