জামিয়া ও আমু-র বিপন্ন পড়ুয়াদের পাশে একজোট অনাত্মীয় হাত

সোমবার সকালে আলিগড় কর্তৃপক্ষ আচমকাই পড়ুয়াদের হস্টেল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২২
Share:

বহু পড়ুয়াই কী করবেন, কোথায় যাবেন ভেবে দিশেহারা। ছবি: পিটিআই।

এ সময়টায় পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত থাকার কথা ছিল তাঁদের। তার বদলে, বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে ঘোর শীতে এক চিলতে ছাদের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দোরে দোরে। অথবা সদ্য কলেজে পা রাখা তরুণ দলের দুশ্চিন্তা, বাড়ি ফেরার রাহাখরচ কী ভাবে জোগাড় হবে! এই সঙ্কটে হঠাৎ বেশ কয়েকটি অনাত্মীয় হাত পরম আপনার জন হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডিরত কলকাতার মেয়ে সানজিদা পারভিনের ফেসবুকে ঘোষণা: ‘আলিগড় ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সব পড়ুয়া টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন না, কিংবা থাকার জায়গা খুঁজছেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’ সানজিদার স্বামী মেহেবুব সাহানা জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য পিএইচডি শেষ করে দিল্লিতে চাকরিরত। তিনিও বলছেন, ‘‘অসহায় ছাত্রছাত্রীদের পাশে যে ভাবে পারি, দাঁড়াব!’’ মেহেবুবের কথায়, ‘‘নিজে কিছু দিন আগেই ছাত্র ছিলাম। ওদের কষ্টটা বুঝি! চটজলদি কয়েক জন গবেষক-ছাত্রের সঙ্গে বসে টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনা করেছি। ওরা নিজেদের ভাতার টাকা থেকে সাহায্য করছে। যে যে ভাবে পারি, ছাত্রদের খবর জোগাড় করছি। কাউকে কাউকে দিল্লিতে চেনা পেয়িংগেস্ট হস্টেলেও রাখা হয়েছে।’’

সোমবার সকালে আলিগড় কর্তৃপক্ষ আচমকাই পড়ুয়াদের হস্টেল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। জামিয়ায় সরাসরি তেমন ঘোষণা না-হলেও পুলিশি জুলুমের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অচলাবস্থা। এই পরিস্থিতিতে বহু পড়ুয়াই কী করবেন, কোথায় যাবেন ভেবে দিশেহারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির কাছে সনিয়ারা, বিরোধী ঐক্য তবু অধরাই

বর্ধমানের বাসিন্দা মেহেবুব ছাড়াও জামিয়া মিলিয়ায় ভূগোলের গবেষক ধুলিয়ানের নওয়াজ শরিফ, তাঁর সতীর্থ মালদহের সফিকুল ইসলাম, লক্ষ্মীকান্তপুরের মেয়ে, জনসংখ্যাতত্ত্বের গবেষক তানিয়া নাসরিন প্রমুখ এগিয়ে এসেছেন। একজোট হয়ে তাঁরা একটি তহবিল গড়েছেন। তাতে টাকা পাঠিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন হিন্দু-মুসলিম সুহৃদেরা অনেকেই। ইটাহারের ছেলে জামিয়ায় ভূগোল পড়ুয়া নুরুল হাসান বা আলিগড়ের এমএ পড়ুয়া ধুলিয়ানের হাসান মালিক ভেবে পাচ্ছিলেন না, কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন! ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় মা-বাবাও ছেলেকে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। মেহেবুব-নওয়াজেরা এগিয়ে আসায় আপাতত মুশকিল আসান। কিছু ক্ষেত্রে পরিচিত কয়েক জন ‘পেয়িং গেস্ট’-এর ঘরে দু-এক জন করে ছাত্রদের রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে দিল্লির কয়েক জন শিখ ছাত্রও টুইট করে কয়েকটি গুরুদ্বারের নম্বর দিয়েছেন। আলিগড়ের প্রাক্তনী, এইমসের চিকিৎসক শাহ আলমেরও আহ্বান, ‘জখম ছাত্রেরা অস্থিরোগের বহির্বিভাগে আমার কাছে আসুন। অমুক সময়ে আমি থাকব!’

আলিগড়ের কয়েক জন কেরলের ছাত্রেরও থাকার ব্যবস্থা করছেন মেহেবুবেরা। সকালে সানজিদার ফেসবুক-বার্তা দেখে সাড়া দিয়েছেন আলিগড়ে ভূগোলের গবেষক উত্তর দিনাজপুরের চোপরার মেয়ে সামসাদ পারভিন। তিনি এ দিন বলছিলেন, ‘‘সোমবার সকালে হস্টেল ছাড়তে হবে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। চেয়েচিন্তে একটা রাত হস্টেলেই কাটিয়েছি। সকালে সানজিদার মেসেজটা দেখে যেন প্রাণে বাঁচলাম। এত তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে বাড়ি ফেরা মুশকিল ছিল।’’

আলিগড়ে ইতিহাসের গবেষক মহম্মদ মসিউর রহমানও বিপন্ন পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বললেন, ‘‘এমন আগে ঘটেনি। দুপুর দুটোয় বলা হল, বিকেলের মধ্যে হস্টেল খালি করতে হবে। ঠান্ডায় ট্রেনে স্লিপারে ফিরতেও ছাত্রেরা সমস্যায়! আমি বেশ কয়েক জনকে দিল্লিতে আমার দিদির বাড়িতে এনে রেখেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন