কুর্নিশ কুড়োচ্ছেন জামিয়ার উপাচার্য

পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়  মনে করিয়ে দিলেন, বাম আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্য ছাত্র ও কর্মীদের থেকে কাজে বাধা পেয়ে দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতার। ছবি: পিটিআই।

‘তোমাদের পাশে আছি। তোমরা একা নও।’ ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতারের এই আশ্বাস এখন ভাইরাল। পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের পেটানোর পর তাঁর ‘শিরদাঁড়া টান-করা’ অবস্থান বর্তমানে কম দেখা যাচ্ছে বলেও চর্চা চলেছে।

Advertisement

কী বলছেন এ রাজ্যের শিক্ষাবিদরা? পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিলেন, বাম আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্য ছাত্র ও কর্মীদের থেকে কাজে বাধা পেয়ে দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি। দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়িতে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সেরেছেন। কিন্তু পুলিশ ডাকেননি। অমলবাবুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেন না কর্তৃপক্ষ। জামিয়া মিলিয়ার উপাচার্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্সির অধ্যক্ষ থাকার সময়ে সেখানে অশান্তি বা গন্ডগোল হয়নি, এমন তো নয়। উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জানতেও চাওয়া হয়েছে যে পুলিশ ডাকব কি না। বলতাম, এটা আমার কলেজ। আমি কন্ট্রোল করব।’’

রাজ্যের ‘রীতি’ ভেঙে সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকার ঘটনা ঘটেছে। ২০০৫ সালে যাদবপুর ক্যাম্পাসে মাঝরাতে পুলিশ ঢুকে অনশনরত পড়ুয়াদের মারধর করেছিল। জ্যোতি বসু তখনই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। তৎকালীন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন আচার্য-রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। ২০১৪ সালেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের হঠাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেন তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। যার জেরে শুরু হয় ‘হোক কলরব’ আন্দোলন। দীর্ঘ কয়েক মাসের আন্দোলনের পরে অভিজিৎ চক্রবর্তীকে ইস্তফা দিতে হয়। এর পর যাদবপুরের উপাচার্য হয়ে আসেন সুরঞ্জন দাস। গত সেপ্টেম্বরে যাদবপুর ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ডাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। কিন্তু সুরঞ্জনবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, পদত্যাগ করতেও তিনি রাজি, কিন্তু পুলিশ ডাকবেন না। জামিয়া মিলিয়ায় পুলিশের লাঠিপেটা সম্পর্কে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করার অধিকার আছে। সেখানে পুলিশ আসবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র পরিসরকে রক্ষা করা কর্তব্য।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সংশোধিত নাগরিক আইন তুলে নিতে আর্জি, সনিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির কাছে বিরোধীরা

তবে অভিজিৎবাবুর দাবি, পুলিশ তাঁর আমলে ক্যাম্পাসে এলেও লাঠি চালায়নি, পড়ুয়াদের সরিয়ে দিয়েছিল। জামিয়া মিলিয়ার ঘটনা নিয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না এবং তাই মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই হয়েছে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে জামিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার যা বলার বলবেন। অনির্বাণবাবুকে ফোন এবং মেসেজ করে রাত পর্যন্ত উত্তর মেলেনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এদিন দুপুরে প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। রাত পর্যন্ত তিনি উত্তর পাঠাননি।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলির কথায়, ‘‘নাজমা আখতার তো ঠিক কাজই করেছেন। জামিয়া, আলিগড় বা যাদবপুর, ছাত্রদের উপর পুলিশি অত্যাচার কখনও বরদাস্ত করা যায় না।’’ একই ভাবে রাজ্য বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়ারা আমাদের সন্তানসম। তাঁদের রক্ষা করাই আমাদের কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন