কাশ্মীরই বড় চ্যালেঞ্জ নয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

নির্বাচনের পাশাপাশি সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের প্রশ্নে এ বার পদক্ষেপ করতে চাইছে মোদী সরকার। অদূর ভবিষ্যতে তা রূপায়ণের গুরুদায়িত্বও এসে পড়তে চলেছে অমিতের উপরে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

অমিত শাহ।

জম্মু-কাশ্মীরে দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইনিংস শুরু করলেন অমিত অনিলচন্দ্র শাহ। নির্বাচনের পাশাপাশি সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের প্রশ্নে এ বার পদক্ষেপ করতে চাইছে মোদী সরকার। অদূর ভবিষ্যতে তা রূপায়ণের গুরুদায়িত্বও এসে পড়তে চলেছে অমিতের উপরে। সঙ্গে রয়েছে জঙ্গি সমস্যা মেটানো। সব মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরই নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বড় পরীক্ষা হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

গত জুনে কাশ্মীরে পিডিপি ও বিজেপি সরকারের জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই প্রথমে রাজ্যপালের শাসন ও ছ’মাসের পর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত বিধানসভা নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছেন খোদ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। উপত্যকায় দ্রুত নির্বাচন করানোর পক্ষে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি। এ বারের লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার সময়েই জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওই কমিটি নিয়োগ করা হয়েছিল। কমিশনের কাছে জমা দেওয়া তাদের রিপোর্টে শীঘ্র নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছে কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ বর্ষা আসার আগে, না-হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন পর্ব মিটিয়ে ফেলা যেতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসেন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাতে জুন বা জুলাইয়ে নির্বাচন করার সুপারিশ খারিজ করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কর্তাদের বক্তব্য, একে রমজান মাস চলছে, উপরন্তু সামনেই অমরনাথ যাত্রা। যাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে বিপুল সংখ্যক আধাসেনার প্রয়োজন। ফলে ওই সময়ে কোনও ভাবেই উপত্যকায় ভোট করা সম্ভব নয়। তবে সেপ্টেম্বরে ভোট করতে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি নেই কেন্দ্রের। একই সঙ্গে বিকল্প সময় হিসেবে দিওয়ালির শেষে অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে ভোট করানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিশনকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, নতুন মন্ত্রীর মতো স্বরাষ্ট্র সচিবেরও আগামী সপ্তাহে দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে। তার পরেই নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠতে পারে।

Advertisement

জঙ্গি দমন প্রশ্নে, বিশেষ করে উপত্যকার ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মন্ত্রকের অন্দরে। গত সরকারের আমলে জঙ্গি রুখতে কড়া নীতি নিয়েছিলেন মোদী। এতে জঙ্গিদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও উপত্যকা শান্ত হওয়ার পরিবর্তে আরও উত্তপ্ত হয়েছে। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গুলির পরিবর্তে আলোচনার উপরে জোর দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ জঙ্গি দমন প্রশ্নে চরিত্রগত ভাবে রাজনাথের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। দলীয় নেতাদের অনেকে এমনও বলছেন, কাশ্মীরের বিষয়ে ‘দ্বিতীয় বল্লভভাই পটেল’ হতে চাইছেন অমিত শাহ। ফলে জঙ্গি দমন প্রশ্নে সরকার এ বার আরও কড়া অবস্থান নিতে পারে বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা।

বিপুল জয়ের পরে সঙ্ঘ পরিবার ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা বিলোপের দাবিতে বিজেপির উপরে ফের চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনসঙ্ঘের আমল থেকেই তারা সংবিধানের ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা ও অধিকার দেওয়ার বিপক্ষে সরব। অন্য দিকে ৩৫এ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা না-হলে কেউ ওই রাজ্যে জমি কিনতে পারেন না। এমনকি রাজ্যেরই কোনও মহিলা জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা নন, এমন কাউকে বিয়ে করলে তাঁদের উত্তরসূরিরা জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। বিজেপির মতে, এতে রাজ্যের অস্থায়ী বাসিন্দা ও মহিলাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। তাই চলতি সরকারের আমলেই ওই দু’টি ধারা প্রত্যাহারের ব্যাপারে হেস্তনেস্ত করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর। হাত দিলে উপত্যকা ফের অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে জঙ্গি হানাও। তাই শান্তিপূর্ণ আলোচনা না উগ্র দমননীতি— কোন পথে অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীর সমস্যার মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন