প্রতীকী ছবি।
ভূস্বর্গের পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। কপালে ভাঁজ বাড়ছে দিল্লির।
বোনের বিয়ের আসর থেকে তরুণ কাশ্মীরি সেনা অফিসার উমের ফৈয়াজকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ৬ জঙ্গিকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অপরাধীদের খোঁজে শুরু হয়েছে জোর তল্লাশি। তদন্তে নেমে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছিল, এই খুনের পিছনে রয়েছে হিজবুল মুজাহিদিন। আইজি (কাশ্মীর) এস জে এম গিলানির বক্তব্য, যেখান থেকে ফৈয়াজকে অপহরণ করা হয়, সেই সোপিয়ানে হিজবুল সক্রিয়। তাদের সঙ্গে লস্কর জঙ্গিরাও ছিল বলে সন্দেহ।
জঙ্গিরা যে ভাবে এক কাশ্মীরিকে বোনের বিয়ের আসর থেকে অপহরণ করে খুন করেছে, তার পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, গত কয়েক দিনে সেনায় ভর্তির লাইনে যে ভাবে স্থানীয় যুবকেরা যোগ দিয়েছেন, তাতে আশঙ্কার মেঘ দেখছে জঙ্গিরা। সে কারণেই এই ভাবে একজন কাশ্মীরিকেও খুন করতে ছাড়েনি তারা। খুনের আগে ফৈয়াজের উপর অত্যাচারও চালানো হয়েছিল। আর এটা করে জঙ্গিরা বাকিদেরও বার্তা দিয়েছে বলেই অনুমান গোয়েন্দাদের। জঙ্গিরা যে কাশ্মীরি যুবকের ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়া মেনে নেবে না, সেই আশঙ্কা ছিলই ফৈয়াজের পরিবারের। সে কারণে তাঁর সেনায় যোগ দেওয়ার খবর গোপন রেখেছিলেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু বিষয়টি চাপা থাকেনি। এ বার ফৈয়াজ যখন বোনের বিয়েতে বাড়ি ফেরে, তখনই খবর যায় জঙ্গিদের কাছে।
সেনা অফিসার খুনের ঘটনায় কড়া বদলা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনা। এই পরিস্থিতিতে উপত্যকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও তাতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই। উল্টে অনন্তনাগ, বারামুলা, আখনুর, রাজৌরি-সহ বিভিন্ন এলাকায় এ দিনও নানা অশান্তির খবর মিলেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাক সেনার নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের ঘটনা। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষি পৌঁছেছেন শ্রীনগরে। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আগামিকাল রাজ্যপাল এনএন ভোহরা এবং সেনা-কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।
কাল রাত থেকেই রাজৌরির নৌশেরা সেক্টরে পাক বাহিনী লাগাতার ভারতীয় সেনার পোস্ট ও জনবসতি লক্ষ করে মর্টার ও শেল ছুড়ছে। পাক গোলায় আখতার বি নাম এক স্থানীয় মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্বামী মহম্মদ হানিফ আহত হয়েছে বলে সেনা সূত্রের খবর। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনাও। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রাজৌরির বেশির ভাগ স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
অনন্তনাগে এ দিন সকাল থেকে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় স্কুল ছাত্রদের সংঘর্ষ বড় আকার নিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর ‘উদ্ধত’ আচরণের জবাব দিতেই পড়ুয়ারা পথে নেমেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। যদিও এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা নিরাপত্তাবাহিনী স্বীকার করেনি।
উত্তপ্ত অবস্থায় নানা মহল থেকে দাবি উঠছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিক কেন্দ্র। দাবি উঠছে, সেনার হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। কাশ্মীরে জঙ্গিদের কোমর ভেঙে দিতে উপযুক্ত পরিকল্পনা করা হোক। জবাব দেওয়া হোক পাকিস্তানকেও। শুধু দিল্লিতে বসে বিবৃতি না নিয়ে আম-কাশ্মীরির মন জয়ের জন্য সর্বাত্মক ঝাঁপাক কেন্দ্র। না হলে উপত্যকার পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।