ঝিলম নদী পাহারা দেওয়ার কথাটা কারও মাথাতেই আসেনি, ওই পথেই হামলা

টনক নড়িয়েছিল উরি। কিন্তু তাতেও যে‌ পুরোপুরি কাজ হয়নি তা প্রমাণ করল বারামুলা। গত কাল ৪৬ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের শিবিরে হানার পরে হাত কামড়াচ্ছেন সেনা গোয়েন্দারা। শিবিরের পাশে ঝিলম নদী পাহারা দেওয়ার কথাটা যে কার্যত কারও মাথাতেই আসেনি, তা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন শীর্ষ কর্তারাও।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

বারামুলা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

আখনুর সেক্টরে সেনা তত্পরতা। ছবি: এএফপি।

টনক নড়িয়েছিল উরি। কিন্তু তাতেও যে‌ পুরোপুরি কাজ হয়নি তা প্রমাণ করল বারামুলা। গত কাল ৪৬ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের শিবিরে হানার পরে হাত কামড়াচ্ছেন সেনা গোয়েন্দারা। শিবিরের পাশে ঝিলম নদী পাহারা দেওয়ার কথাটা যে কার্যত কারও মাথাতেই আসেনি, তা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন শীর্ষ কর্তারাও।

Advertisement

বারামুলার হামলায় বিএসএফের জওয়ানরা সেনা ও জঙ্গিদের গুলির মধ্যে পড়ে হতাহত হয়েছেন কি না, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে সরকারের অন্দরে।

উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হানার জবাবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে ভারতীয় সেনা। তার পরে যে জঙ্গি ও পাক সেনা-আইএসআই বদলা নেওয়ার চেষ্টা করবে তা কার্যত স্পষ্ট ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। জঙ্গিদের বিভিন্ন দল ও তাদের পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের মধ্যে কথাবার্তায় আড়ি পেতেও সেই তথ্য জেনেছিলেন তাঁরা। তার পরেও বারামুলায় সেনা-বিএসএফ শিবির আক্রান্ত হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

বারামুলায় আক্রান্ত শিবিরের পাশেই ঝিলম নদী। তাতে কোনও পাহারা ছিল না। সেনা গোয়েন্দাদের মতে, ডিঙি নৌকো করে ঝিলম বেয়ে কার্যত শিবিরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় জঙ্গিরা। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার মতো আজ ঝিলমের অপর প্রান্তে পাহারায় বসানো হয়েছে জওয়ানদের। বারামুলার সঙ্গে বাকি কাশ্মীরের সংযোগকারী চারটি সেতুতে বসেছে কাঁটাতারের বেড়া।

গত কালের হামলায় নিহত হয়েছেন নিতিন যাদব নামে এক বিএসএফ জওয়ান। আহত হয়েছেন আরও এক জন। দুই জঙ্গি খতম হয়েছে বলে রাতে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশ। কিন্তু সকালে কারও দেহ উদ্ধার না হওয়ায় সেই দাবি থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের।

এখন সেনা, বিএসএফ, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ-সহ সব বাহিনীই মানছে যে, হামলাকারীরা পালিয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে দাবি, জঙ্গিরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল। কিন্তু এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হয়েছে। তা না হলে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

বিএসএফের এক কর্তা জানিয়েছেন, গ্রেনেড ও মর্টারের মতো অস্ত্র ব্যবহারই করতে পারেননি জওয়ানরা। জনবসতিকে ঢাল করে জঙ্গিরা সম্ভবত পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যায় বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

এই হামলার সময়ে সেনা-জঙ্গি গুলিবৃষ্টির মধ্যে পড়ে বিএসএফ জওয়ানদের হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও চাপানউতোর চলছে সরকারের অন্দরে। ওই ঘাঁটির সুরক্ষা বেষ্টনীর প্রথম স্তরে ছিলেন বিএসএফ জওয়ানরা। পরের স্তরে সেনা। ফলে প্রাথমিক ভাবে জঙ্গিদের হামলার জবাব দেয় বিএসএফই। তার পরে সেনা গুলিবৃষ্টি করতে শুরু করে। সেই সময়ে বিএসএফ জওয়ানরা সেনা-জঙ্গি গুলিবৃষ্টির মধ্যে পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের। সরকারি ভাবে অবশ্য এই ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন বিএসএফের আইজি প্রকাশ চন্দ্র।

এই হামলা ফের কাশ্মীরে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের স্লিপার সেল থাকার বিষয়টিও নজরে এনেছে। উরির পরে এই ধরনের সেলের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছিলেন সেনা গোয়েন্দারা। তাঁদের ধারণা, কাশ্মীরে এমন অনেক পাক স্লিপার সেল আছে যাদের কথা স্থানীয় পুলিশের অজানা। বারামুলাতেও তেমনই কোনও স্লিপার সেল জঙ্গিদের সাহায্য করে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

৬ বছর আগে জঙ্গিমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল বারামুলা। ঝিলমের বুক বেয়ে সেই শহরে সন্ত্রাস ফিরল আরও দাঁতনখ বের করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন