জেএনইউয়ে ফের ‘তাণ্ডব’এবিভিপি-র, উৎসব বদলে গেল আতঙ্কে

গত কাল দুপুরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আর দেখা যায়নি এবিভিপি-র ছাত্রদের। কিন্তু বাম জোটের অভিযোগ, গত কাল মাঝরাতে তারা ফিরে আসে হাতে রড নিয়ে। বেছে বেছে হস্টেলের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাস চালায় বাম ছাত্রনেতাদের উপর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share:

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। —ফাইল চিত্র।

আবির খেলা আর উদ্দাম নাচ চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গেল আতঙ্কের কালো ছায়ায়। কাল জয়ের পর স্লোগানে গলা ফাটাচ্ছিলেন যে সব তরুণ কণ্ঠ, আজ সেখানে শুধুই ফিসফাস।

Advertisement

গত কাল দুপুরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আর দেখা যায়নি এবিভিপি-র ছাত্রদের। কিন্তু বাম জোটের অভিযোগ, গত কাল মাঝরাতে তারা ফিরে আসে হাতে রড নিয়ে। বেছে বেছে হস্টেলের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাস চালায় বাম ছাত্রনেতাদের উপর। অভিযোগ, আজ প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের গাড়ির সামনেই চলেছে মারধর। নিশানায় রয়েছেন সদ্য ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট এন সাই বালাজিও। হিংসার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে জেএনইউ শিক্ষক সংগঠন। আজ বসন্তকুঞ্জ থানায় একটি ৭ পাতার অভিযোগপত্র জমা করেছেন বালাজি। এবিভিপি-র ছাত্র প্রতিনিধি সৌরভ শর্মার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।

বালাজির বক্তব্য, ‘‘আমাকে শেষ রাতে সাটলেজ হস্টেলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক জন ছাত্রনেতার উপর লাঠি নিয়ে চড়াও হয়েছিল এবিভিপি-র গুন্ডাবাহিনী। এর পর ওরা ক্রমশ দলে বাড়তে থাকে। বাইরে থেকেও লোক চলে আসে, যারা আদৌ এখানকার ছাত্র নয়। মারধর শুরু হয়। ঝিলম হস্টেলের ছাত্ররা আক্রান্ত হয়। একজন সামনের বাগানে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিল। আমরা দৌড়ে যাই তাকে বাঁচাতে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’ তিনি নিজেও মার খেয়েছেন বলে দাবি বালাজির।

Advertisement

আজ বিকেলে ছাত্র এবং শিক্ষকদের সম্মিলিত একটি শান্তি মিছিল বেরিয়েছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে গণহিংসার শিকার হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।’ আজ রাতে জেএনএউ-এর রেজিস্টারের পক্ষ থেকে একটি নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাম্পাসে সমস্ত রকম মিটিং মিছিল সমাবেশ আপাতত নিষিদ্ধ করা হল।’

শান্তি মিছিল। ছবি: ফেসবুক থেকে।

রাতে ইতিহাসের অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ উত্তেজিত কণ্ঠে জানালেন, ‘‘সকালে বসন্তকুঞ্জ থানায় অভিয‌োগ জানাতে যাওয়ার সময় বালাজি-সহ আক্রান্ত ছাত্রদের সঙ্গে আমরা কয়েক জন ছিলাম। পুলিশের গাড়ি থেকে বাম জোটের ছাত্রদের বের করে জনা পনেরো ব্যক্তি আমাদের ঘিরে ধরে। যাদের কয়েকজন এখানকার ছাত্র, বাকিদের চিনিও না। আমাদের বলা হয় সরে যেতে। কারণ বাম জোটের ছাত্রছাত্রীরা নাকি মাওবাদী নকশাল — এদেরকে মেরেই ফেলা হবে! সে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি।’’ শিক্ষকদের একাংশ এবং ছাত্রদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের সম্পুর্ণ মদত রয়েছে এই হিংসায়। থানাতেও অভিযোগ প্রথমে জমা নেওয়া হচ্ছিল না। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (দক্ষিণ পশ্চিম দিল্লি) দেবেন্দর আর্যের কাছে এই নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘জেএনএউ থেকে ছাত্রদের মারপিটের খবর এসেছে ভোর তিনটে নাগাদ। বসন্তকুঞ্জ থানায় অভিযোগও গ্রহণ করা হয়েছে। এর পর আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন