জাতীয় নাগরিক পঞ্জী উন্নীতকরণ প্রক্রিয়ার গোড়া থেকেই বিভিন্ন গলদ থাকার অভিযোগ তুলে রাজ্যে বরাক ও ব্রহ্মপুত্রের বঙ্গভাষী, চা জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘুরা মিলিত ভাবে যৌথ প্রতিবাদ মঞ্চ গঠন করতে চলেছেন। এ নিয়ে আগামী ২৮ জুন নগাঁও জেলার হোজাইতে একটি গন-সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
যৌথ মঞ্চ গঠনের অন্যতম প্রধান আহ্বায়ক, তিন বারের মন্ত্রী তথা হোজাইয়ের বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক চিকিৎসক অর্ধেন্দু দে আজ জানান, নাগরিক পঞ্জী নিয়ে তিনি অসমের স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলার কাছে তথ্য অধিকার আইনের অধীনে কয়েকটি বিষয়ের লিখিত জবাব চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, হাজেলা যে উত্তরগুলি দিয়েছেন তা অসত্য ও অসম্পূর্ণ। অর্ধেন্দুবাবু বলেন, ‘‘নাগরিক পঞ্জীতে নাম না থাকলে ভোটার তালিকা থেকেও নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাগরিক পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যাঁরা ১৯৭১ সালের পর অসমে এসেছেন, তাঁদের নাম কোন যুক্তিতে নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না?’’ এনআরসি নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভার সাব-কমিটির সদস্য ছিলেন অর্ধেন্দুবাবু। কিন্তু তাঁর দাবি, এই বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়নি।
অর্ধেন্দুবাবু প্রশ্ন তোলেন— অসমের অনেক এলাকায় প্রত্যন্ত গ্রাম-পাহাড়-চা বাগানে থাকা পরিবারগুলির ‘লিগ্যাসি ডেটা’ নেই। তাঁরা সরকারের নির্ধারিত ১২টি প্রমাণ কী ভাবে জোগাড় করবেন? সরকারি বিভাগে গিয়ে চাইলেই ৫০-৬০ বছর আগের নথি পাওয়া সম্ভব নয়। এমনকী, রাজ্যের অনেক এনআরসি সেবাকেন্দ্রে ১৯৫১ সালের ভোটার তালিকাও দেওয়া যায়নি। কারণ, সেই তালিকা অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, এনআরসি ফর্ম বিলি করার পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল মার্চ মাসে। জমা দেওয়ার শেষ তারিথ ৩১ জুলাই। অথচ ফর্ম বিলি করাই শুরু হয়েছে জুন মাসে। জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্ধেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘স্বল্পশিক্ষিতদের পক্ষে ওই ফর্ম পূরণ করা অসম্ভব।’’
বরাকের চার কংগ্রেস বিধায়ক ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, ২০১৪ সালের ভিত্তিতে নাগরিক পঞ্জী তৈরি করতে হবে। কাটলিছড়ার বিধায়ক গৌতম রায়, পাথারকান্দির মনিলাল গোয়ালা, রতাবাড়ি ও বদরপুরের বিধায়ক কৃপানাথ মালা ও জামালউদ্দিন হুমকি দিয়েছেন, নাগরিক পঞ্জীর নিয়মের গেরোয় আটকে এক জনও বৈধ বাঙালি নাগরিকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেলে তাঁরা বরাকে ভোট বয়কট করবেন।
এ নিয়ে অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী বিপরীত মেরুতে রয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েও অর্ধেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বরাকের বিধায়করা অন্যায় দাবি করেননি। কারণ ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। ১৯৭১-এর তালিকা তৈরির সময়ই তিন লক্ষাধিক মানুষকে সন্দেহজনক ভোটার হিসেবে তালিকার বাইরে রাখা হয়েছিল।’’ তিনি আরও জানান, ১৯৯৭ সালের তালিকা ছেঁকে ২০১৪ সালের তালিকা তৈরি। তার ভিত্তিতে লোকসভা নির্বাচনও হয়। সেই হিসেবে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা বাংলাদেশি মুক্ত। তার ভিত্তিতে নাগরিক পঞ্জী তৈরিতে আপত্তি কোথায়?
অর্ধেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘আমি সরকারের অংশ ও কংগ্রেসের বিধায়ক। কিন্তু সরকার যদি মানুষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়, আমি আপত্তি তুলবই।’’ তিনি জানান, নাগরিক পঞ্জীর বিষয়টি নিয়ে হোজাইতে ২৮ জুন অরাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। সেখানে সব দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে, নাগরিক পঞ্জী উন্নীতকরণের সমস্যা ও প্রকাশ না পাওয়া বিভিন্ন গোঁজামিলের বিষয় তুলে ধরা হবে। সকলের মত নিয়েই এরপর গড়া হবে যৌথ মঞ্চ। মূলত নাগরিক পঞ্জী উন্নীতকরণের বর্তমান প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আইনি যুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলাই হবে মঞ্চের উদ্দেশ্য।