National News

মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়েই মধ্যপ্রদেশে কৃষি ঋণ মকুব করলেন কমল নাথ

শিখ দাঙ্গার খচখচানি যায়নি কমল নাথের রাজনৈতিক জীবনেও। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যু পরবর্তী শিখ নিধনে ইন্ধন দেওয়াই শুধু নয়, তাঁর সামনেই শিখ সম্প্রদায়ের দু’জনকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৮
Share:

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর কমল নাথ। ছবি: পিটিআই

মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট পরেও শিখ দাঙ্গার ভূত পিছু ছাড়ছে না কমল নাথের। ’৮৪-র শিখ দাঙ্গায় সোমবারই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সজ্জন কুমারের। আর সেই দিনই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন কমল নাথ। অথচ তিনিও একই মামলায় অভিযুক্ত। এই সূত্রেই শিখ দাঙ্গার ‘অস্ত্রে’ শান দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। দলের নেতা-মন্ত্রীরা গাঁধী পরিবারকে টেনে এনে তোপ দেগেছেন, কেউ ছাড় পাবেন না। মধ্যপ্রদেশের নয়া মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এর পিছনে বিজেপির ষড়যন্ত্রই দেখছেন। আর শপথ নেওয়ার পর প্রথম সিদ্ধান্তই নিয়েছেন কৃষি ঋণ মকুবের।

Advertisement

নিম্ন আদালতের একটি রায় খারিজ করে শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত ৭৩ বছরের সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দিল্লির রাজ নগরের একটি পরিবারের পাঁচ সদস্যকে তাঁর মদতে এবং তাঁর সামনেই খুন করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রাজনগর গুরুদ্বার।

শিখ দাঙ্গার খচখচানি যায়নি কমল নাথের রাজনৈতিক জীবনেও। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যু পরবর্তী শিখ নিধনে ইন্ধন দেওয়াই শুধু নয়, তাঁর সামনেই শিখ সম্প্রদায়ের দু’জনকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দাঙ্গার সময় মধ্য দিল্লির রাকবরগঞ্জে একটি মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন কমল নাথ। সেই মিছিল থেকেই শিখ সম্প্রদায়ের দু’জনকে হত্যা করা হয়। সেই সময়ও কমল নাথ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, এবং তিনি উত্তেজিত জনতাকে রোখার চেষ্টা করেননি। তবে তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দেয় নানাবতী কমিশন। কমিশনের রিপোর্টে ‘বেনিফিট অব ডাউট’-এ ছাড় দেওয়া হয় কমল নাথকে।

Advertisement

আরও পডু়ন: তিন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর শপথে বিরোধী জোটের হাওয়া, নেই শুধু মায়া-মমতা-অখিলেশ

ছাড় পান কংগ্রেসের অন্দরেও। কারণ, তিনি গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ। দলের অভ্যন্তরেও অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাই শিখ দাঙ্গার প্রেক্ষিতে সজ্জন কুমার, জগদীশ টাইটলার, এইচ কে এল ভগতের মতো কংগ্রেস নেতাদের রাজনৈতিক কেরিয়ার কার্যত শেষ হয়ে গেলেও কমল নাথ বরাবরই ছিলেন মূলস্রোতে। একাধিক বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেমন হয়েছেন, দলেও বরাবরই থেকেছেন পদাধিকারী। আর এবার বসলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে বৈঠক, কলকাতায় শুনানি, যাত্রার জন্য একাধিক কৌশল নিচ্ছে বিজেপি

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট কুসুমাস্তীর্ণ হল না কমল নাথের। শপথের দিন থেকেই শিখ দাঙ্গার পুরনো ক্ষত নতুন করে দগদগে হয়ে উঠল এল সজ্জন কুমারের কারাদণ্ডের নির্দেশে। প্রতিপক্ষরাও পুরনো অস্ত্রই নতুন করে শান দিতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইট করেছেন, শুধু সজ্জন কুমার নয়, গাঁধী পরিবারকেও ’৮৪-র দাঙ্গার মাসুল গুণতে হবে। দেরিতে হলেও বিচার পেলেন শিখ দাঙ্গার ভুক্তভোগীরা।

পঞ্জাবের ভাতিন্দার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরত কউর আবার সরাসরি কমল নাথের নাম করেই বলেন, ‘‘আজ সজ্জন কুমার, কাল জগদীশ টাইটলার, তার পর কমল নাথ এবং সব শেষে গাঁধী পরিবার।’’

তবে এর মধ্যে বিজেপির ষড়যন্ত্র দেখছেন কমল নাথ। তিনি বলেন, ‘‘১৯৯১ সাল থেকে আমি কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছি। বিভিন্ন সময়ে একাধিক সংসদীয় পদেও থেকেছি। তখন কেউ প্রশ্ন তোলেনি। এখন হঠাৎ এক অদৃশ্য শক্তি এই কাজ করছে।’’ সেই অদৃশ্য শক্তি যে বিজেপি, সেটাও স্পষ্টই বলেছেন কমল নাথ।

ভোটের আগেই ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে রাহুল গাঁধী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার দশ দিনের মধ্যে কৃষিঋণ মকুব করা হবে। সেই দশ দিনও অপেক্ষা করতে হল না। শপথ নেওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রিসভার প্রথম সিদ্ধান্ত হিসেবে কৃষি ঋণ মকুব করে দিয়েছেন কমল নাথ। ৩১ মার্চ এর আগে সরকারি বা সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য সরকারের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে। সিদ্ধান্তের পরই রাহুল গাঁধী টুইট করেন, একটি রাজ্যে হল, বাকি রইল আর দু’টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন