বাম মুখে নতুন ভাষা জোগাচ্ছে লাল চপ্পল

নীল হাওয়াই চটি বাংলায় ভোটের প্রচারে পথ হাঁটছে। এ হল লাল হাওয়াই চটির এগিয়ে চলার গল্প। দলের শীর্ষ নেতারা এখন তাকে কাছে টেনে ছবি তুলতে চান। কিন্তু লাল হাওয়াই চটি বলে, সম্মেলনে এসে ছবি তুলে কোনও লাভ হবে না।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

মঞ্চে কানহাইয়া। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ

নীল হাওয়াই চটি বাংলায় ভোটের প্রচারে পথ হাঁটছে। এ হল লাল হাওয়াই চটির এগিয়ে চলার গল্প।

Advertisement

দলের শীর্ষ নেতারা এখন তাকে কাছে টেনে ছবি তুলতে চান। কিন্তু লাল হাওয়াই চটি বলে, সম্মেলনে এসে ছবি তুলে কোনও লাভ হবে না।

বাম নেতারা স্লোগান তোলেন, ‘লাল কিলে পে লাল নিশান, মাঙ্গ রাহা হ্যায় হিন্দুস্তান’। লাল চটি বলে, লাল কেল্লায় তিরঙ্গা উড়িয়ে রাখাটা বেশি জরুরি।

Advertisement

বাম-জেডি(ইউ)-আরজেডি নেতারা বিজেপিকেই বড় শত্রু বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু লড়াইয়ে বাম ও কংগ্রেসে ঘোষিত জোট হবে কি না, নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদের সঙ্গে বামেরা ভোটে লড়বে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। লাল চটি নির্দ্বিধায় বলে, ‘দুশমন বড়া হ্যায়, ইয়ে বড়ি বাত নেহি। হামনে কিতনা দোস্ত বানায়ে, ইয়ে বড়ি বাত হ্যায়।’

নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে আসন সমঝোতা হবে নাকি রণকৌশলগত আঁতাত হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিচার করেন। লাল চটি বলে, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে চাই ‘আদর্শগত জোট’।

লাল হাওয়াই চটির মালিক কানহাইয়া কুমার তিহাড় থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিরেই বলেছিলেন, জেএনইউয়ের বামপন্থীরা যে ভাষায় কথা বলেন, তা মানুষ বুঝতে পারেন না। আজ কানহাইয়া বোঝালেন, তিনি শুধু বামপন্থীদের ভাষা বদলের কথা বলছেন না। চিন্তাভাবনারই আমূল পরিবর্তন চাইছেন। তার জন্য বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলের নেতাদের প্রবল ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন।

আজ যে ঝাঁকুনির সাক্ষী রইলেন সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর মতো বিভিন্ন বাম দলের নেতারা। ঝাঁকুনি খেলেন আরজেডি-জেডি(ইউ)-এনসিপি-র মতো দলের নেতারাও। বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী’ রাজনীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের এক ডজন যুব সংগঠন এক মঞ্চে এসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সেই এক ডজন দলের নেতা-কর্মীদের সামনেই কানহাইয়ার তীব্র কটাক্ষ, ‘‘এত আলাদা দল তৈরি করে ফেলেছি আমরা, যে ব্র্যাকেটে শব্দ ঢুকিয়ে নাম লিখতে হয়।’’

কানহাইয়া এই মুহূর্তে ভারতের রাজনীতিতে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে জাতীয় রাজনীতিতেও। শশী তারুর কাল মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ভগৎ সিংহ ছিলেন তাঁর সময়ের কানহাইয়া।’’ আজ বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, ভগৎ সিংহর অপমান করেছেন তারুর। আর কংগ্রেস বলছে, তারুরের বক্তব্য দলের বক্তব্য নয়। তারুর পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, তিনি মোটেই দু’জনের তুলনা করেননি। দিল্লির গালিব ইনস্টিটিউটে, যুব সম্মেলনের মঞ্চেও আজ কানহাইয়াকে ‘দেশের নায়ক’, ‘গণতন্ত্রের পুত্র’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

কী বলছেন কানহাইয়া?

বলছেন, এ সব অলঙ্কার থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে হবে।

সম্মেলনে সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা হাজির থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে বসিয়ে রাখতে কানহাইয়াই ছিলেন শেষ বক্তা। মঞ্চে বসেই শুনেছেন, আসএসএস-বিজেপিকে কী ভাবে তুলোধনা করছেন নেতারা। সবশেষে বলেছেন, ‘‘আগে এই সব সভায় পিছনের সারিতে বসে সকলের কথা শুনতাম। আজ মঞ্চে বসে শুনছি। কিন্তু তখনও নিজেকে দোষারোপ করতাম, এখনও করছি। কী উল্টোপাল্টা বক্তৃতা করছি আমরা! বিজেপি-আরএসএস সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিবাদী— এ সব বড় বড় কথা বলে কিস্যু হবে না। তরুণ প্রজন্মের সামনে বিকল্প তুলে ধরতে হবে।’’ দলের নেতারা যখন মোদীকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করছেন, তখন কানহাইয়ার যুক্তি, ‘‘আত্মসমালোচনা না করলে কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। জার্মানিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের দায় নিতে হবে কমিউনিস্ট, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদেরও।’’

বাম নেতাদের অনেকেই বলছেন, কানহাইয়া যা বলছেন, সেগুলো অপ্রিয় হলেও সত্যি। কংগ্রেস থেকে শুরু করে সব বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ দল একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছে। কিন্তু কীভাবে সেই লড়াই হবে, নির্বাচনে কী ভাবে আঁতাত হবে, সেই জল্পনাতেই সময় কেটে যাচ্ছে। নিজেদের পৃথক সত্তা বজায় রাখতেই সকলে ব্যস্ত। কানহাইয়া সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন