মায়ার প্রচারে ভাঙন কংগ্রেসের দলিত ভোটে

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, গত বারের তুলনায় চল্লিশেরও বেশি আসন খোয়ানো কংগ্রেসেরই এ বাবদ ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

ফাইল চিত্র।

ভোটের অঙ্ক বলছে ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়েও প্রাপ্ত ব্যালটে মায়াবতীর স্থান নগণ্য। কিন্তু ভোটের রসায়ন জানাচ্ছে, তাঁর ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে কর্নাটক নির্বাচনে দলিত ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে সক্ষম হয়েছেন বিরোধীরা। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, গত বারের তুলনায় চল্লিশেরও বেশি আসন খোয়ানো কংগ্রেসেরই এ বাবদ ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

রাজ্যের দলিত ভোটকে নিজেদের বাক্সে টানার জন্য কংগ্রেস, বিজেপি এবং জেডি(এস) গত এক মাস ধরে প্রচার এবং প্রতিশ্রুতির ঝড় বইয়ে দিয়েছে। জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট গড়ে মায়াবতী নিজে প্রচারে নেমে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে তুলোধনা করেছেন দলিত প্রশ্নে। সূত্রের মতে, এই দলিত ভোট টানতেই দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর জেডি(এস) এ বার মায়াবতীর সঙ্গে জোট করেছে।

কেনই বা দলিত ভোট এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বারের কর্নাটক ভোটে?

Advertisement

সম্প্রতি কর্নাটক সরকার জাতিগত জনগণনা করার পর নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলি। সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে না এলেও বেশ কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে লিঙ্গায়তদের সংখ্যা গত কয়েক বছরে ১৭ শতাংশ থেকে কমেছে। ভোক্কালিগাদের সংখ্যাও ১২ শতাংশ থেকে কমে ৮-এর ঘরে। উল্টোদিকে দলিতদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ।

কর্নাটকের ঐতিহ্য অনুসারে দলিত ভোট সাধারণত কংগ্রেসের সঙ্গেই থেকেছে। কিন্তু গত দেড় দশক ধরে ধীরে ধীরে ভাঙন ধরছিল কংগ্রেসের এই ভোটব্যাঙ্কে। দলিতদের মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তিক শ্রেণি চামারদের কাছে টানার রাজনীতি ২০০৪ সাল থেকেই শুরু করে বিজেপি। গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস সরকার এই প্রান্তিক দলিতদের জন্য কিছুই করেনি বলে প্রচার চালায় তারা। তাঁদের উপরে অত্যাচার হয়েছে বলেও দাবি করে নরেন্দ্র মোদীর দল। রাজনীতিকদের মতে, দলিতদের একাংশ পা বাড়িয়েই রেখেছিলেন বিকল্পের জন্য। মায়াবতীর উপস্থিতিতে তা অনুঘটকের কাজ করেছে। দলিতদের প্রতি বৈষম্য ও তাঁদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ মায়াবতীও তুলেছেন তাঁর জনসভাগুলিতে। তবে দলিতদের এই অংশ যে মায়াবতীর কথা শুনে বিএসপি অথবা দেবগৌড়াকে সমর্থন করেছেন তা নয়। বরং বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চলেছে ধরে নিয়ে, মোদীর উপরেই ভরসা রাখতে চেয়েছেন তাঁরা।

দলিত অধ্যুষিত মধ্য কর্নাটকের শিমোগা জেলার দলিত নেতা এইচ এন চন্দ্রপ্পার কথায়, ‘‘কং‌গ্রেস দলিত সম্প্রদায়ের মাদিগা প্রার্থীকে এখান থেকে দাঁড় করিয়েছিল। আমরা তাই দলবদ্ধ ভাবে কংগ্রেসকেই সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু দলিতেরা এ বার ভোট দিয়েছেন কৌশলগত ভাবে। যে এলাকায় দলিত স্বার্থের জন্য বা সংরক্ষণের জন্য কোনও কাজ করেনি সরকার, সেই সব এলাকায় আমরা বিজেপিকেই ভোট দিয়েছি।’’ দক্ষিণ কন্নড়ের টুমকুর, হাসান, চামারাজানগরের মত পিছিয়ে থাকা দলিত অধ্যুষিত জেলায় এ বার গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পড়েছে। এখানে বিজেপির ফলও ভাল হয়েছে গতবারের তুলনায়। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘শুধু দক্ষিণ কন্নড়ই নয়, গ্রামীণ জেলাগুলিতে দলিত ভোটদাতার সংখ্যা এ বার তুলনায় অনেকটাই বেশি। বোঝাই যাচ্ছে, বদল চেয়ে এ বার ভোট দিয়েছেন তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন