বক্তা: কর্নাটকের বিজয়পুরায় কংগ্রেসের প্রচার সভায় সনিয়া গাঁধী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
এলেন, দেখলেন এবং ঝড় তুললেন।
প্রায় দু’বছর পরে ভোটের প্রচারে সনিয়া গাঁধীর আক্রমণাত্মক চেহারার পরে এমনটাই বলছেন তাঁর বিরোধীরাও।
কংগ্রেসের হাত থেকে ‘গড়’ কর্নাটক ছিনিয়ে আনতে মরিয়া গোটা বিজেপি। ঘন ঘন আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে দোসর দলের সভাপতি অমিত শাহ। হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে আসরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। এই অবস্থায় পাল্টা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে সঙ্গী করে রাজ্য চষে ফেলছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। এবং তার মধ্যেই শেষ বেলায় ময়দানে নেমে ঝড় তুললেন সনিয়া।
এ দিন বিজয়পুরায় সভা করেন সনিয়া। তার কয়েক ঘণ্টা আগে এখানেই সনিয়াকে বিঁধে প্রচার করে গিয়েছেন মোদী। তাই সনিয়া যেন তৈরিই হয়ে এসেছিলেন। তা ছাড়া কর্নাটক তাঁর ‘পয়া মাঠ’। এখানেই বল্লারী কেন্দ্রে ১৯৯৯ সালে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী সুষমা স্বরাজকে হারিয়ে ছিলেন তিনি। নিজের প্রথম লোকসভা ভোটযুদ্ধে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এ দিন নেমেছিলেন সনিয়া। মোদীর ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে তাঁর অভিযোগ, খরা-পীড়িত অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কর্নাটক। সনিয়ার কথায়, ‘‘এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতে চাইলেও মোদী করেননি। তিনি শুধু চাষিদের না, গোটা কর্নাটককেই অপমান করেছেন।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বিদ্রুপ, ‘‘আমি মানি, উনি ভাল বক্তা। আমি খুশি হব, যদি তাঁর বক্তৃতায় দেশের পেট ভরে! কিন্তু বক্তৃতায় তো পেট ভরে না!’’ কর্নাটকে প্রচারে নেমে বারবার কংগ্রেসের দুর্নীতির কথা তুলেছেন মোদী। এ দিন কংগ্রেস আমলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেও এখনও কেন দুর্নীতি দমনের জন্য লোকপাল গঠিত হয়নি, সে প্রশ্ন তুলে সনিয়া পাল্টা বলেন, ‘‘চার বছর হয়ে গেল। আপনি তো লোকপাল গঠনই করলেন না!’’
সনিয়ার এই সভার আগেই ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিজেপির একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। কর্নাটকের প্রচারে আসা মোদী-যোগীকে ‘উত্তর ভারতের আমদানি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। যোগীর প্রচারের আগে তাঁর আসল নাম যে অজয় বিস্ত, তা উল্লেখ করে আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস। আজ সনিয়ার আসল নাম উল্লেখ করে বিজেপি টুইট করে, ‘‘আজ আন্তোনিও মাইনো কর্নাটকে তাঁর শেষ দুর্গকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আসছেন! ম্যাডাম মাইনো, কর্নাটকের এমন কোনও ব্যক্তিকে দরকার নেই, যিনি দেশের ১০টি অমূল্য বছর নষ্টের জন্য দায়ী।’’
এর আগে মোদীও সনিয়ার ইতালীয় পরিচয় নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন। রাহুলকে খোঁচা দিতে গিয়ে ১ মে এক সভায় মোদী বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি ১৫ মিনিট কাগজ না দেখে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের সাফল্য বলুন। যে কোনও ভাষায়। মায়ের মাতৃভাষা হলেও চলবে।’’ যদিও বিরোধীদের বিদ্রুপ, ‘‘মোদী তো ওই সভায় নিজেই কাগজ দেখে বক্তৃতা দিয়েছিলেন!’’
কিন্তু এ সব তো নেহাতই বিতর্ক।
এ দিনের পরে অনেকেই বলছেন, দ্রাবিড়-ভূমে শেষ বেলায় কংগ্রেসের পালে দখিনা বাতাস বইয়ে দিলেন সনিয়া গাঁধী।