স্তব্ধতা আর উৎসবে শুরু নতুন পথ চলা শুরু দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের

জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম উপরাজ্যপাল গিরিশচন্দ্র মুর্মুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বজ্রআঁটুনি নিরাপত্তার দেওয়ালই তোলা রইল দিনভর। সকাল থেকে শ্রীনগরের রাস্তায় আধাসেনার ভিড়। কাঁটাতার, ব্যারিকেড।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

উদ্‌যাপন: আনন্দে মেতেছেন লাদাখের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার। এপি

সকাল সাতটায় লে। পৌনে ১টায় শ্রীনগর। আজ পরপর দুই অনুষ্ঠানে দুই উপরাজ্যপালকে শপথবাক্য পাঠ করালেন জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তল। আত্মপ্রকাশ করল নতুন দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল— জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। কাশ্মীরের দিন কাটল কড়া নিরাপত্তায়, পুরোদস্তুর বন্‌ধের আবহে। আর লে-র রাস্তায় রীতিমতো নাচগান হল বিজেপির উদ্যোগে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ এক সুরে দাবি করেছেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে জোরালো ধাক্কা দিয়েছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের সিদ্ধান্ত। সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ নিজেদের রাজ্য গুজরাতেই ছিলেন দুই নেতা। মোদী সেখান থেকে টুইট করেন, ‘‘দশকের পর দশক ধরে ভারতীয়দের মাঝখানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ নামক একটি অস্থায়ী দেওয়াল ছিল। দেওয়ালের ও-পারে ছিলেন আমাদেরই ভাই-বোনেরা। এই দেওয়াল কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বাড়িয়ে তুলছিল। সেই দেওয়ালটাকে ভেঙে দেওয়া গিয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর আরও দাবি, আজ থেকে উপত্যকায় নবযুগের শুরু। রাজনৈতিক স্থিরতা আসবে, নিজেদের স্বার্থে সরকার ভাঙা-গড়ার খেলা শেষ হবে।

জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম উপরাজ্যপাল গিরিশচন্দ্র মুর্মুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বজ্রআঁটুনি নিরাপত্তার দেওয়ালই তোলা রইল দিনভর। সকাল থেকে শ্রীনগরের রাস্তায় আধাসেনার ভিড়। কাঁটাতার, ব্যারিকেড। সাধারণের জন্য রাজভবনে যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ। শপথ অনুষ্ঠানে বিধানসভার স্পিকার ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না (কারণ, তাঁরা অধিকাংশই বন্দি)। প্রবেশাধিকার ছিল দু’তিনটি সংবাদ সংস্থার। চ্যানেলগুলিকে ভিডিয়ো ‘ফিড’ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক।

Advertisement

প্রধান বিচারপতি গত কাল থেকে লাদাখেই ছিলেন। আজ সকালে লে-তে উপরাজ্যপাল রাধাকৃষ্ণ মাথুরকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে শ্রীনগর রওনা হন তিনি। শ্রীনগরের রাস্তায় হকারেরাও বেরোননি। শ্রীনগরের বাইরেও আজ ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি দোকান প্রায় সবই ছিল বন্ধ। চলেনি যানবাহনও।

সরকারি অফিসে অবশ্য হাজিরা চোখে পড়েছে। কার্গিল বাদে সেই অর্থে বিক্ষোভ হয়নি উপত্যকায়। কিন্তু একান্তে কাশ্মীরিদের অনেকে কেন্দ্র ও বিজেপির ‘ক্ষমতার লোভ’ নিয়ে মুখ খুলেছেন। অবিভক্ত জম্মু-কাশ্মীরের শেষ মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির সংবাদ প্রতিবেদন-সহ টুইট করেছেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছে, মিস মুফতি (কন্যা)-র সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেন মোবাইলে আলোচনা না-করি। বিগ ব্রাদার মোবাইল-ল্যান্ডলাইনে নজর রাখছেন। সরকার শুধু ইজরায়েলের স্পাইওয়্যারের সাহায্য নিচ্ছে না, গাজ়ার মতো নিপীড়নও চালাচ্ছে কাশ্মীরে।’’

আজ থেকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রের। অমিতের কথায়, ‘‘৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ খারিজের ফলে জম্মু-কাশ্মীরের ভারতভুক্তি সম্পূর্ণ হল। পূরণ হল পটেলের স্বপ্ন।’’ জম্মু-কাশ্মীরে পুদুচেরির মতোই আইনসভা থাকছে, আসন পুনর্বিন্যাস হলে যার বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়াবে ১১৪। লাদাখে আইনসভা নেই। আজ লে-র রাস্তায় চোখে পড়েছে পটেল-জয়ন্তী উপলক্ষে বিজেপির ‘একতার জন্য দৌড়’ কর্মসূচির তোরণ। তাতে লেখা, ‘স্বাগত কেন্দ্রশাসিত লাদাখ’। স্থানীয় পোশাকে যাঁরা রাস্তায় নেমে নাচগান করেছেন, তাঁদের হাতে তেরঙ্গা ছাড়াও ছিল বিজেপির পতাকা।

আজও ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছে চিন। নতুন দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন প্রসঙ্গে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, ‘‘ব্যর্থ, বেআইনি ও একতরফা সিদ্ধান্ত। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কিছু এলাকা যে চিনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এই সত্যিটা কিন্তু বদলাবে না।’’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারের পাল্টা, ‘‘এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করুক চিন। বরং তারাই পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন