উপত্যকার উত্তাপ ছিটকে এসে পড়ছে রাজধানীর পাতেও!
লাগাতার কার্ফু, হিংসা আর উত্তেজনায় অস্থির হয়ে রয়েছে কাশ্মীর। আর তাকে নিয়ে চলছে ভারত এবং পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধ। আর তার জেরে প্রবল সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে দিল্লির কাশ্মীরি রেস্তোরাঁর মালিকেরা। অবস্থা এমনই যে রেস্তোরাঁ মালিকদের চিন্তা, হয়তো খাদ্যরসিকদের কাছে গুস্তাবা, রোগন জোস বা রিস্তা পরিবেশন সাময়িক ভাবে বন্ধই করে দিতে হবে।
উদয় পার্কের কাশ্মীরি রেস্তোরাঁ আহাদ সন্স-এর মালিক মহম্মদ শাফি’র কথায়, “একটা ভাল কাশ্মীরি রেস্তোরাঁ চালাতে গেলে ভাল ওয়াজা-র (কাশ্মীরি রাঁধুনি) দরকার। আমার রাঁধুনি গরমে গ্রামে গিয়েছিল, কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতির জন্য সেখানেই আটকে গেছে। সে দিল্লি ফিরতেই পারছে না।”
শুধু রাঁধুনিই নয়, কাশ্মীরি বহু খাবারের মশলাও আসে জম্মু বা শ্রীনগর থেকে। কার্ফুর জন্য মালপত্রও রাজধানীতে ঠিক ভাবে আসছে না। পুরনো দিল্লির একটি কাশ্মীরি রেস্তোরাঁর মালিক গুলাম হুসেন বলছেন, “কাশ্মীরে কার্ফুর জন্য আমি আমার বহু নিয়মিত ক্রেতা হারাচ্ছি, কারণ তাদের ধানিওয়াল কোর্মা বা রিস্তা’র মতো পদ দিতে পারছি না। এ সবের জন্য যে বিশেষ মশলা লাগে তা কাশ্মীর থেকে আনানো হয়, কিন্তু এখন তা আনানো সম্ভব হচ্ছেনা। রোজ ৫০ কেজি মাংস কিনতে হয় আমায়, কিন্তু ক্রেতা কমে যাওয়ায় মাত্র ৩ কেজি মাংসই বিকোচ্ছে না।”
আরও পড়ুন: ভোটব্যাঙ্কে ক্ষয়, গুজরাতেই জন্মদিন পালন করবেন মোদী
আরও একটি মত হল, কাশ্মীরে যা যা ঘটছে তাতে প্রকারান্তরে একটা নেতিবাচক মনোভাবও এসেছে দিল্লির অনেকের কাছে। সে জন্য কাশ্মীরি রেস্তোরাঁগুলিতে মানুষ কম আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাশ্মীরি রেস্তোরাঁ মালিকের কথায়: “কাশ্মীরের প্রতি মানুষ নেতিবাচক হয়ে গেছে, তাই আমাদের ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।” যেটি শুনে সমালোচক ও খাবারের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা পুষ্পেস পান্থ বলছেন, “দিল্লিতে কাশ্মীরি খাবার খুবই জনপ্রিয়। কাশ্মীরের ঘটনার জন্য দিল্লির কাশ্মীরি রেস্তোরাঁগুলিতে মানুষ কম আসছে যা খুবই দুঃখের।”
কাশ্মীরের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। আর এ সবের জন্য রাজধানীর ভোজনরসিক মানুষদের হয়তো কাশ্মীরি খাবারের স্বাদ থেকে দীর্ঘ সময় বঞ্চিত থাকতে হবে। খাবারের পাশাপাশি টান পড়ছে পশমিনার সম্ভারেও। দিল্লি হাটের এমনই এক ব্যবসায়ী ওইয়াহিদ আশরফ জানিয়েছেন, “ দিল্লির এই গরমে পশমিনা শাল এখন সে ভাবে বিক্রি হচ্ছে না, এখানকার মানুষ এখন শীতের জামা কেনেন না। দিল্লিতে এই ধরনের উলের জামাকাপড় বিক্রির জন্য এটা অফ সিজন। এখানে দোকানের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল বলে আমি এসেছি। কাশ্মীরে এখন কার্ফু চলছে বলে আমি ফেরতও যেতে পারছি না, আমার কারখানাও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।”
জনপথ-এর মতো জায়গায় পুরনো জিনিসই বিক্রি করছেন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা। জনপথের ব্যবসায়ী জাকিরের মতে, “এই অফ সিজনের সময় বিদেশি ক্রেতারা আমাদের জিনিস বেশি কেনেন। অন্যান্য বার এই সময়ের মধ্যে নতুন স্টক আসা শুরু হয়ে যায়, কিন্তু এখন কারখানাগুলি বন্ধ। তবে এই সময়ের এই ক্ষতি তত বড় নয়। শীতকাল হলে আমাদের ব্যবসায় অনেক বেশি ক্ষতি হত।”