নোট বাতিলে আরও বিপর্যয় বাকি আছে, মত কৌশিকের

অমর্ত্য সেনের পরে কৌশিক বসু। নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হলেন ভারত সরকারের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক।

Advertisement

নিউ ইয়র্ক

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

অমর্ত্য সেনের পরে কৌশিক বসু। নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হলেন ভারত সরকারের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং বর্তমানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। রবিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে কৌশিকবাবু বলেছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত খুব খারাপ ভাবে রূপায়িত হয়েছে এবং খুব সম্ভবত তা উদ্দেশ্যপূরণে ব্যর্থ হবে। গত শনিবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও একই সুরে বলেছিলেন, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরত আনার প্রতিশ্রুতির মতো নোট বাতিলের এই পদক্ষেপও খুব সম্ভবত ব্যর্থ হবে।

Advertisement

কৌশিকবাবু তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘দুর্নীতি, জঙ্গিদের হাতে টাকা যাওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি রোখার কথা বলে নোট বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এর পরিকল্পনা করা হয়েছে খুব খারাপ ভাবে, বাজারের নিজস্ব নিয়মের প্রতি বিন্দুমাত্র নজর দেওয়া হয়নি এবং সম্ভবত এটি ব্যর্থ হবে।’’ কৌশিকবাবুর মতে, নোট বাতিলের ফলে দুর্নীতি সাময়িক ধাক্কা খাবে। কিন্তু বিপর্যয় নেমে আসবে অর্থনীতিতে। যাঁদের আঘাত করা লক্ষ্য নয়, তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সবচেয়ে বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং দরিদ্রদের উপরেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। এবং সবচেয়ে খারাপ সময় এখনও আসেনি।’’

অমর্ত্যবাবু অবশ্য আরও কড়া ভাষায় মোদী সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল, নোট বাতিলের ভাবনা ‘হঠকারীর মতো’ কার্যকর করার মধ্যে দিয়ে সরকারের ‘স্বৈরাচারী চরিত্রই প্রকট হয়েছে।’ কৌশিকবাবুর মতো তাঁরও অভিযোগ, এর ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্গতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দীর্ঘ মেয়াদে কেন সাধারণ মানুষ ভুগবেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে কৌশিকবাবু লিখেছেন, ‘‘এই নীতির ফলে মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে কাটছাঁট করছেন। তার ফলে জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু সেটা কোনও সুখবর নয়। কারণ, এর ফলে চাষিরা এবং ছোটখাটো জিনিস যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর প্রভাব গোটা অর্থনীতিতেই ছড়িয়ে পড়বে। এবং ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি খুব সম্ভবত মুখ থুবড়ে পড়বে।’’

কৌশিকবাবুর মতে, শুধুমাত্র আর্থিক নীতিতে বদল এনে কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না। কারণ, অধিকাংশ কালো টাকাই নগদে রাখা হয় না। রাখা হয়, সোনা-রুপো, আবাসন বা বিদেশি ব্যাঙ্কে। তা ছাড়া, নোট বাতিলের পরে কালো টাকার কারবারিরা আরও বড় মাপের নোটে নিজেদের সম্পদ পাল্টে নেবেন। অতএব, কালো টাকা রুখতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন দরকার। বদল দরকার মানসিকতাতেও।

‘‘ভারতের মতো দেশে, যেখানে বেআইনি অর্থনীতি মূলধারার অর্থনীতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে, সেখানে কালো কারবার বন্ধে সরকারের অদক্ষ হস্তক্ষেপ আইনি পথে জীবননির্বাহের চেষ্টায় রত বিরাট সংখ্যক মানুষের বিপুল ক্ষতি করতে পারে’’— লিখেছেন কৌশিকবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন