আলোচনাসভায় রয়েছেন সলমন খুরশিদ, খুরশিদ মহম্মদ কাসুরি এবং মণিশঙ্কর আইয়ার। শনিবার শহরের এক হোটেলে।—নিজস্ব চিত্র।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া আলোচনা প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মহম্মদ কাসুরি। পাশাপাশি উফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দলবল উপযুক্ত প্রস্তুতি না নিয়ে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসার মাসুল দিচ্ছে বলেও মনে করেন আগরা শীর্ষ বৈঠকের সময়ের এই পাক বিদেশমন্ত্রী।
শনিবার কলকাতায় একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন কাসুরি। তিনি বলেন, ভারত-পাক আলোচনা সব সময়েই সদর্থক পদক্ষেপ। ১০ জুলাই নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফের বৈঠকও ইতিবাচক। তবে এর পরেই তিনি শরিফ সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘পাক কূটনীতিকদের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না। তাই উফা-য় বৈঠকের শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটি নিয়ে পাকিস্তানের নানা মহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। সেখানে কাশ্মীরের মতো পাকিস্তানের উদ্বেগের বিষয়গুলির উল্লেখটুকুও করা হয়নি।’’ কাসুরি এ দিন স্বীকার করেন, আগরা বৈঠকের সময়েও পাক কূটনীতিকদের মধ্যে এই প্রস্তুতির অভাব ও তাড়াহুড়ো ছিল। সেই কারণেই পারভেজ মুশারফ ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর বৈঠক সে সময়ে ফলপ্রসূ হতে পারেনি।
তা হলে কী ভাবে এগোতে পারে দুই প্রতিবেশী দেশ? কাসুরির সূত্র হল, আরও কথা বলতে হবে দু’পক্ষকে। প্রয়োজনে মুশারফের জমানার ‘ব্যাক চ্যানেল’ যোগাযোগও ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই ইসলামাবাদে যাতে সার্ক শীর্ষবৈঠকটি হতে পারে এবং সেখানে প্রস্তুতি নিয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসতে পারেন, সে বিষয়ে সব মহলের উদ্যোগী হওয়াটা সব চেয়ে বেশি জরুরি।
জেনারেল পারভেজ মুশারফ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন (২০০২-০৭) বিদেশ মন্ত্রকের ভার সামলানো কাসুরি কাজ করেছেন নয়াদিল্লির তিন বিদেশমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং নটবর সিংহের সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে এ বার ভোটের আগে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা হয়েছিল— মোদী ক্ষমতায় এলে ইসলামাবাদ-দিল্লির সম্পর্কে বিরাট উন্নতি হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। আমরা আরও কিছু সদর্থক পদক্ষেপ আশা করছি।’’
মোদীকে নিয়ে কেন এমন আশার সঞ্চার হয়েছিল পাকিস্তানে?
কাসুরির জবাব, ‘‘বাজপেয়ী জমানাতেই ভারত-পাক সম্পর্ক সব চেয়ে উন্নত হয়েছিল। দু’দেশের নেতারা বিশ্বাস ভরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। বাজপেয়ীর পরে মনমোহন সিংহ আলোচনা প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাবেন কি না, তা নিয়ে আমাদের সংশয় ছিল। তবে চিনের চেঙডু-তে ভারতের বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহ এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন।’’ এর পরেই মুশারফের বিদেশমন্ত্রী যোগ করেন, ‘‘বাজপেয়ী জমানার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই পাকিস্তানের অনেকে ভেবেছিল মোদী ক্ষমতায় এলে ফের সম্পর্কের উন্নতি হবে।’’
গত তিন বছরে ভারত-পাকিস্তান ২৮ বার বিভিন্ন স্তরে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। নরেন্দ্র মোদীর শপথে এসেও তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিন্তু তার পরেও বার বার সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এমনকী উফা বৈঠকের পরেও নিয়ন্ত্রণ রেখার বিভিন্ন সেক্টরে গুলি বর্ষণ করেছে পাক রেঞ্জার্সরা। ভারতও তার জবাব দিয়েছে।
এর পরেও কি আলোচনার কোনও মূল্য রয়েছে?
কাসুরির জবাব, ‘‘আলোচনা ছাড়া সমস্যা মেটানের অন্য কোনও পথও তো খোলা নেই!’’ তাঁর যুক্তি, বিশ্বের অন্যতম দু’টি বড় সেনাবাহিনী— যাদের হাতে ক্রুজ এবং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, রয়েছে পরমানু বোমার ভাণ্ডার। সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা ছাড়া উপায়ই বা কী।
আলোচনা সভায় কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার, সলমন খুরশিদ, বিজেপি নেতা শেষাদ্রি চারী, পাকিস্তানে সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনার সত্যব্রত পাল বা বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব জাভেদ আখতার যেমন, তেমনই পাকিস্তানের দুই সেনেটর জাভেদ জব্বর ও তাজ হায়দর এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক বাবর আইয়াজ— সকলেই বলেন, ধৈর্য ধরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া পথ খোলা নেই দু’দেশের। সেই সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে হবে দু’দেশের নেতৃত্বকে।