অপহরণই ব্যবসা হাইলাকান্দির জঙ্গিদের

দক্ষিণ হাইলাকান্দিতে জঙ্গিদের সন্ত্রাস চলছেই। বন্দুকের মুখে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় কার্যত প্রতি দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

অরূপ ভট্টাচার্য

কাটলিছড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

দক্ষিণ হাইলাকান্দিতে জঙ্গিদের সন্ত্রাস চলছেই। বন্দুকের মুখে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় কার্যত প্রতি দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

ভৌগোলিক ভাবে অঞ্চলটি মিজোরাম ও ত্রিপুরার সীমানাঘেঁষা। যেমন দুর্গম, তেমনই যোগাযোগের দিক থেকেও পিছিয়ে। সেটাই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায় জঙ্গিরা। এক দিকে নিরাপত্তা রক্ষীদের পক্ষে বন্ধুর পথ পেরিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো কষ্টকর। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে গেলে অসম পুলিশের পক্ষে এগোনোও সম্ভব হয় না।

সরকারি কর্মচারী থেকে ব্যবসায়ী, যাকে ইচ্ছা তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। মূল লক্ষ্য মুক্তিপণ আদায়। গত দুই দশক ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে। একেক সময় একেক জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। আর মুক্তিপণ আদায়ের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে দক্ষিণ হাইলাকান্দিতে।

Advertisement

পঞ্চুরাম এপোট রিয়াং থেকে শুরু করে ধন্যরাম রিয়াং বা আতাউর-জাকির থেকে রাজেশ চর্কি— সবাই একই লক্ষ্যে বন্দুক হাতে নিয়েছে। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ বরাক ভ্যালি (ইউএলএফবিভি), ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উদলা), আতাউর বাহিনী, জাকির বাহিনী, আর বর্তমানে ব্রু রেভলিউশনারি আর্মি অফ ইউনিয়ন নাম দিয়ে যে ‘ব্যবসা’
চলছে তাতে চেহারা, নেতৃত্ব, কাঠামোর ফারাক থাকতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য অভিন্ন।

কয়েক বছর হল, পঞ্চুরাম এপোট রিয়াং-এর নেতৃত্বে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ বরাক ভ্যালি-র ৩০৪ জন সদস্য অস্ত্র-সহ আত্মসর্মপণ করে। ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উদলা)-র প্রধান ধন্যরাম রিয়াং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যায়। একই ভাবে আতাউর এবং জাকিরও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায়। তবু দক্ষিণ হাইলাকান্দি থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ রোধ করা যায়নি। অথচ এই এলাকার সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, বর্ডার আউট-পোস্ট তৈরি করা হয়েছে। এমনকী রয়েছে আধা সামরিক বাহিনী, সিআরপি ক্যাম্পও। কিছু দিনের জন্য সেনা শিবিরও বসানো হয়েছিল।

পুলিশের বক্তব্য, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর যৌথ অভিযান বাধা পাচ্ছে। অসমের দিক থেকে অভিযান হলে অবস্থানের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা মিজোরাম বা ত্রিপুরা সীমানায় দিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রতি বারই দেখা যায়, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরই জঙ্গিরা পাল্টা আঘাত করে। জঙ্গি কার্যকলাপের জেরে দক্ষিণ হাইলাকন্দির শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজকর্মেরও ব্যাঘাত ঘটছে।

অসমের পূর্বতন সরকারের কার্যকালে জঙ্গিদের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। নতুন সরকার গঠনের পরও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।
তার প্রমাণ— গত ২১ জুলাই বন বিভাগের বিট অফিসার মনোজ কুমার সিনহার অপহরণ।

৩০ জুন আসাম পুলিশ ও আসাম রাইফেলস-এর যৌথ অভিযানে কালাপাহাড় ও গেন্ডাছড়া থেকে তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতরা হল ত্রিপুরার মনাছড়ার করচাই রিয়াং, মিজোরামের কলাশিবের রাজকুমার রিয়াং ও গেন্ডাছড়ার বাবুলাল রিয়াং। তিন জঙ্গির বাড়ি তিন রাজ্যে। তা থেকেই বোঝা যায়, জঙ্গিরা যথেষ্ট সংগঠিত। ৩ জনকে গ্রেফতারের বদলা হিসেবে ৩ দিনের মধ্যে দক্ষিণ হাইলাকান্দির বলদাবলদি থেকে সুপারি ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বড়ভুঁইঞাকে বাড়ি অপহরণ করা হয়।

দু’টি অপহরণেই দায় স্বীকার করেছে রাজেশ চর্কির নেতৃত্বাধীন ব্রু রেভলিউশনারি আর্মি। তারা শুধু দক্ষিণ হাইলাকান্দি নয়, পার্শ্ববর্তী মিজোরাম এবং ত্রিপুরাতেও ছড়িয়ে। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জঙ্গিদের সমূলে উৎখাত করতে হলে অসম, মিজোরাম ও ত্রিপুরাকে একযোগে অভিযান চালাতে হবে।

শেষপর্যন্ত অবশ্য বিশেষ কোনও চাপ বা আসাম পুলিশ ও আসাম রাইফেলস-এর জোরদার অভিযানের জন্যই হোক, জঙ্গিরা দুই অপহৃতকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন