রাজনীতির পাশা পাল্টে যেতে পারে এ বার। ২০১৪-র ১৬ মে ভোট গোনা শুরু হতেই টিভির সামনে ভেঙে পড়েছিল গোটা দেশ। যদিও বদলের কারিগর সে দিন গোটা সকালটাই কাটিয়ে দেন অন্তঃপুরে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত জীবনের এমনই না-জানা নানা ঘটনা নিয়ে কলম ধরেছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মিডিয়া উপদেষ্টা ও সাংবাদিক ল্যান্স প্রাইস। বইয়ের নাম, ‘দ্য মোদী এফেক্ট: ইনসাইড নরেন্দ্র মোদী’স ক্যাম্পেন টু ট্রান্সফর্ম ইন্ডিয়া’। বইটিতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার তো রয়েইছে। পাশাপাশি মোদী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পীযূষ গয়াল, প্রকাশ জাভড়েকর, স্মৃতি ইরানির মতো মন্ত্রী, উপদেষ্টা দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেও প্রধানমন্ত্রীকে চেনার চেষ্টা করেন ‘দ্য মোদী এফেক্ট’-এর লেখক।
নতুন বইয়ের সৌজন্যেই দশ মাস আগের সেই ঐতিহাসিক দিনের কথা সামনে এল এত দিন পর। লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের জন্য কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ছুটে বেরিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাই ফল বেরোনোর দিনটা বরাদ্দ করেছিলেন একেবারেই নিজের জন্য। সকাল সকাল পুজোআচ্চা সেরে বসেছিলেন ধ্যানে। ঘরে ছিল না কোনও টিভি। এমনকী ফোনের সংযোগও। বেলা বারোটায় ফোনের ওপারে প্রথম তাঁর গলা শোনেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। মোদী হাওয়ায় ভর করে দেশ জুড়ে পদ্মফুল ফোটার খবর তিনিই সে দিন শোনান ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে।
বিজেপির এই বিপুল সাফল্য ক’দিন আগে দিল্লি বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে আপের কাছে। যদিও লোকসভা ভোটে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালকেই বিন্দুমাত্র আমল দিতে চাননি বিজেপি নেতারা। লোকসভার লড়াইয়ে সরাসরি টক্কর দিতে বারাণসী কেন্দ্রে মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন কেজরীবাল। ৪৯ দিনের মুখ্যমন্ত্রিত্বের জন্য এক কালে মোদীই এই আপ নেতার নাম রেখেছিলেন একে৪৯। কিন্তু লোকসভার গোটা প্রচারপর্বে এক বারও প্রতিপক্ষের নাম মুখে আনেননি নরেন্দ্র মোদী! এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন প্রাইস। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সাফ জবাব ছিল, “একটা ছোট্ট শহরের নেতা, সংসদের সদস্যও নন। বিরোধী দলের নামজাদা সব নেতার থেকেও বেশি প্রচারের আলোয় আসছেন ইদানীং। এমন এক জনকে পাত্তা না দেওয়ার মতো সময়টুকুও নেই আমার।”
প্রধানমন্ত্রী পদে নাম ঘোষণার পরও একটা বড় সময় সংবাদমাধ্যমের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ভোটের দিন যখন কাছে এসে গিয়েছে, জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রথম মুখ খোলেন তিনি। সেই রহস্যও খোলসা হল এত দিনে। “ইচ্ছে করেই মুখ দেখাইনি খবরের চ্যানেলে। আমার অভাব থাকলেই যে আমাকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল তৈরি হবে। অনেক ভেবেচিন্তেই এগোনো হয়েছে এই পথে” প্রাইসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনা ফাঁস করেছেন মোদী নিজেই।
৪৩৭টি জনসভা। প্রচারের কাজে তিন লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দেওয়া ব্যক্তিগত বিমানে সওয়ার হয়ে চষে ফেলেছিলেন গোটা দেশ। বড় কর্পোরেটরা সফরের টাকা জুগিয়েছিলেন বলে বারেবারেই অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। নরেন্দ্র মোদীর দাবি, পাই-পয়সা হিসেব মিটিয়ে দিয়েছে দল। সেই ক্ষমতা না থাকলে প্রয়োজনে সাইকেলে চেপে পৌঁছতেন জনতার দোরে দোরে।
২০১২ সালে গুজরাতের তখতে বসার পরই দিল্লি দখলের একটা ক্ষীণ আশা জন্মেছিল মনে। মনে হতো, প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে এ বার হয়তো তাঁর নামই ঘোষণা করবে বিজেপি। কিন্তু মনের ইচ্ছে চেপে রাখেন মনেই। কারও কাছে এই দাবি নিয়ে ছুটে বেড়াননি, দাবি মোদীর।
ইচ্ছে এখন বাস্তব। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার পর গত জুলাইয়ে তাঁর সঙ্গে শেষ বার দেখা হয়েছিল ল্যান্স প্রাইসের। ভোট ময়দানে নামার আগে মোদীর প্রস্তুতি পর্ব দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে। আর জয় হাসিলের পর? কেমন লাগছে নতুন দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এই প্রাক্তন সাংবাদিক। “এখনও বিশ্বাস হয় না আমিই এ দেশের প্রধানমন্ত্রী” জবাব দিয়েছিলেন পালাবদলের কাণ্ডারি।
ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাজনৈতিক লড়াই দুই মলাটের মধ্যে ধরা রয়েছে মোদী জীবনের নানা অজানা কাহিনি। অধরা শুধু একটাই অধ্যায়। গোধরা-কাণ্ড। এ নিয়ে মোদীর মুখ খোলাতে হার মেনেছে সাংবাদিকের প্রশ্নবাণও।