গরহাজির আমলারা, প্রশ্নের মুখে জমি বিল

কথা ছিল, সংসদীয় কমিটিতে জমি বিল নিয়ে আলোচনা হবে। শোনা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আমলাদের মতামত। সেই মতো উপস্থিত হয়েছিলেন কমিটির সদস্য সাংসদরা। কিন্তু গরহাজির রইলেন কেন্দ্রীয় আমলারাই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

কথা ছিল, সংসদীয় কমিটিতে জমি বিল নিয়ে আলোচনা হবে। শোনা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আমলাদের মতামত। সেই মতো উপস্থিত হয়েছিলেন কমিটির সদস্য সাংসদরা। কিন্তু গরহাজির রইলেন কেন্দ্রীয় আমলারাই!

Advertisement

আর্থিক সংস্কার ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ আইনের সংশোধনীকেই অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই বিল নিয়ে সংসদীয় কমিটির আলোচনায় আজ মোদী সরকারের চার গুরুত্বপূর্ণ আমলার অনুপস্থিতির জন্য ভণ্ডুলই হয়ে গেল বৈঠক। যার জেরে রিপোর্ট তৈরির জন্য আরও সময় চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। ফলে বিলের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় দেখা দিচ্ছে অনেকের মনে।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকার নিজেরাই কি এখন জমি বিল নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে চাইছে?

Advertisement

গত কালই নীতি আয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে রাজ্যগুলিকে নিজেদের মতো করে জমি অধিগ্রহণ আইন করতে দেওয়ার দাবি উঠেছে। কংগ্রেস ও একাধিক অ-বিজেপি দলশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে গত কালের সেই বৈঠকে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই ওই দাবি তুলেছিল। বৈঠকে জেটলি সেই দাবিকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ’ বলে মন্তব্যও করেছিলেন। তার পরেই আজকের এই ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি রাজ্যের হাতে জমি অধিগ্রহণ আইন তৈরির অধিকার ছেড়ে দিয়ে মোদী সরকার নিজের জমি আইন নিয়ে আপাতত পিছিয়ে আসবে?

কেন্দ্রীয় সরকারের একাংশের ইঙ্গিতও সে দিকেই। কারণ সামনেই বিহারে নির্বাচন। নীতীশ কুমার জমি বিলের বিরোধিতা করার পাশাপাশি মোদী সরকারের বিলকে ‘কৃষক স্বার্থবিরোধী’ বলেছেন। বিজেপি নেতাদেরও অনেকে মানছেন, মোদী সরকারের বিল যে ‘কৃষক স্বার্থবিরোধী’, এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। তার পরেও ওই বিল নিয়ে এগোলে বিহারের ভোটে মূল্য দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরেই। অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে ভোট হতে পারে। মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের মেয়াদ ফুরোচ্ছে সেপ্টেম্বরে। এই অবস্থায় ফের অধ্যাদেশ জারি হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়াতে আজ রাহুল গাঁধী রাজস্থানে পদযাত্রায় গিয়ে ফের জমি বিলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, ‘‘মোদী সরকারকে এক ইঞ্চিও জমি নিতে দেব না।’’

আজ যে ভাবে সংসদীয় কমিটিতে চার জন গুরুত্বপূর্ণ সচিব অনুপস্থিত ছিলেন, তাতে প্রায় সব দলের সাংসদই মনে করছেন, মোদী সরকার নিজেই জমি বিল নিয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না। আজ জমি বিলের জন্য তৈরি সংসদীয় কমিটির সামনে হাজির হওয়ার কথা ছিল শিল্প উন্নয়ন সচিব, জমি সম্পদ সচিব, বিদ্যুৎ সচিব এবং জাতীয় সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবের। অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিল্প উন্নয়ন সচিব অমিতাভ কান্ত জানান, তিনি বিদেশে। বাকি তিন আমলাও অন্য বৈঠক রয়েছে বলে আসেননি। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, একই সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। তার পরে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু সংসদের কর্মসূচি ঠিক করতে বৈঠক ডাকেন। সেখানেই অন্য সচিবরা ব্যস্ত ছিলেন। তাই তাঁরা আসতে পারেননি। কারণ যা-ই হোক, চার সচিবের গরহাজিরায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাংসদরা। শরদ পওয়ার, জয়রাম রমেশ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিমরা কমিটির চেয়ারম্যান সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে স্পষ্ট জানান, সাংসদদের অপমান করা হচ্ছে। বৈঠকের পরে ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করেন, ‘বৈঠক না প্রহসন!’

নীতি আয়োগে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন এ দিন তোলেন শরদ পওয়ার। তাঁর যুক্তি ছিল, সংসদীয় কমিটিতে যখন জমি বিল নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন একই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করছেন কেন? কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী, বিজেডি নেতারাও পওয়ারকে সমর্থন করেন। রাজ্যের হাতে জমি আইন তৈরির অধিকার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন জয়রাম রমেশ। ইউপিএ-জমানার জমি অধিগ্রহণ আইন পাশের সময় যিনি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন। জয়রামের যুক্তি, ওই আইন সংবিধানের যৌথ তালিকা মেনেই করা হয়েছে। রাজ্য নিজের আইন করলেও জমি অধিগ্রহণে কেন্দ্রের আইনে বেঁধে দেওয়া শর্ত শিথিল করতে পারবে না।

প্রাথমিক ভাবে ২৭ জুলাই জমি নিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল সংসদীয় কমিটির। এখন কমিটির সদস্যরা ৩ অগস্ট পর্যন্ত সময় চাওয়া হবে বলে ঠিক করেছেন। যার অর্থ, ৩ অগস্ট রিপোর্ট দিলে তার পরে সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হতে কয়েক দিন বাকি থাকবে। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত কমিটির কাছে ৬৭২টি মতামত জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৬৭০টিই জমি বিলের বিরুদ্ধে! ৫২টি সংগঠন সশরীর কমিটির সামনে হাজির হয়ে মতামত দিয়েছে। যার মধ্যে ২টি বাদে বাকিরা সবাই বিলের বিরুদ্ধে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন