বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ কবে ঘোষণা হবে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এমনিতেই উৎকণ্ঠা রয়েছে। তার মধ্যে সাগরে সমুদ্র বন্দরের শিলান্যাসের কথা বলে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। তিন-চার দিনের মধ্যে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হলে শিলান্যাস কবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন শিবিরে।
আজ লোকসভায় গডকড়ী বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি সাগরে সাড়ে ১৪ মিটার গভীর বন্দর তৈরি হচ্ছে। আর সে জন্য দু’হাজার কোটি টাকার রেল-রোড-ওভারব্রিজ প্রকল্পের রূপরেখাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধির প্রয়োগ শুরুর আগেই ওই প্রকল্পের শিল্যান্যাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ করতে চাইছি। যদি ওঁরা সময় দিতে পারেন তাহলে এখুনি শিলান্যাস করে ফেলা যাবে।’’
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে আজ গডকড়ী হলদিয়া বন্দরের সংস্কারের জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপের কথা জানান। তাঁর দাবি, হলদিয়া বন্দরের সংস্কারের জন্য চেন্নাই আইআইটি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে। হলদিয়া বন্দরের ড্রেজিংয়ের জন্য যে চ্যানেল ছিল সেটিতে বছরে সাড়ে চারশ কোটি টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু ওই চ্যানেল বন্ধ করে দু’শ কোটি টাকা খরচ করে একটি নতুন চ্যানেল বানানো হচ্ছে। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতায় রাজ্যে নয়া বন্দর তৈরি হচ্ছে বলেও দাবি করেন জাহাজমন্ত্রী। এর পরেই অধীরবাবু সাগরে সমুদ্র বন্দরের শিলান্যাসের কথা তোলেন। তার জবাবেই দ্রুত শিলান্যাসের সম্ভাবনার কথা বলেন গডকড়ী।
সরকারি সূত্রে খবর, খুব দেরি হলে আগামী সোমবারের মধ্যে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেবে নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যে কি সত্যিই শিলান্যাস সম্ভব?
বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, সম্ভব যে নয় তা ভালোই জানে কেন্দ্র তথা বিজেপি। গডকড়ী বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের কথা সত্যিই গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে আসতে চান না তা জানেন বিজেপি নেতৃত্ব। মমতা-মোদীকে এখন এক মঞ্চে চান না রাজ্য বিজেপি নেতারাও। তাই আপাতত শিলান্যাসের সম্ভাবনা নেই।
এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘প্রশ্ন ছিল আমার, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে গেলেন নিতিন গডকড়ী। উভয়ের রাজনৈতিক সম্পর্ক দেখছি গভীর সমুদ্র বন্দরের মতোই গভীর।’’ অধীরবাবুর দাবি, ‘‘পারস্পরিক আঁতাতের ছবিটা যাতে ভোটের আগে স্পষ্ট না হয়ে যায় সে জন্য নিশ্চয়ই অনুষ্ঠান পিছিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। বন্দর, বাংলার উন্নয়ন-এ সব নিয়ে ওঁদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’’